গাজীপুর সিটি নির্বাচন হোক একটা মডেল: সিইসি

প্রকাশিত: ৬:৫৬ অপরাহ্ণ, মে ১০, ২০২৩

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের ভিত্তি। আমাদের সবচেয়ে বেশি ফোকাস রাখতে হবে ভোটের দিনের ওপর। ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার দুর্নীতি, অসততা, অপকর্ম হচ্ছে কিনা- যারা আমাদের নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসার থাকবে তাদেরকে এটা নিশ্চিত করতে হবে।

সিইসি বলেন, কেন্দ্রের ভেতরে এবং বুথের ভেতরে কোনো রকম চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে কিনা- এটি নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে ভোট গ্রহণে কোনো রকম দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করা হচ্ছে কিনা। একজন ভোটার যেন, নির্ভিঘ্নে কেন্দ্রে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। প্রয়োজন হলে পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটকে তলব করতে হবে। ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার দুর্নীতি বা অনিয়ম বরদাস্ত করব না।

বুধবার মহানগরের শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার অডিটরিয়ামে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে সারা বিশ্ব তাকিয়ে আছে। এ নির্বাচনের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। আমরা যখন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করি, আমরা যখন দেখি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ আমাদের নির্বাচন নিয়ে কথা বলছে। আমরা কিন্তু তাদের মুখ চেপে ধরতে পারছি না। পৃথিবীটা এখন উন্মুক্ত, গ্লোবাল ওয়ার্ল্ড। আমাদের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকা কথা বলছে, ইউকে কথা বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কথা বলছে, জাপান কথা বলছে এবং ইউনাইটেড ন্যাশনস (জাতিসংঘ) থেকেও কথা বলা হচ্ছে। কাজেই আমাদের গাজীপুর সিটির যে নির্বাচন হবে, এটার গুরুত্ব আমাদের নির্বাচন কমিশনের কাছে অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এত বড় পরিসরে একটা সিটি নির্বাচন হবে। এ নির্বাচন জাতীয়ভাবে অনেক গুরুত্ব বহন করবে বলে আমরা মনে করি। তাই গাজীপুর সিটি নির্বাচন একটা মডেল হোক।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাংগীর আলম, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান।

মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত আজমত উল্লা খান, জাতীয় পার্টি মনোনীত সাবেক সচিব এমএম নিয়াজ উদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, জাকের পার্টির রাজু আহাম্মেদ, স্বতন্ত্র জায়েদা খাতুন, শাহনুর ইসলাম সরকার রনি (রনি সরকার) ও হারুন অর রশীদ।

এ সময় বিভিন্ন সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনে কালো টাকা ছড়ানোসহ নানা অভিযোগ তুললে সিইসি তাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা অনেক কিছু বলেছেন। আমরা এককভাবে তেমন কিছু করতে পারব না। যদি আমাদের সহযোগী প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন তাদের দায়িত্ব শক্তভাবে এবং পেশাগতভাবে ডিসচার্জ না করে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা যেহেতু মেট্রোপলিটন এরিয়া, এখানে কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের গুরুত্ব জেনারেলি ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেটের যেটা আছে তার থেকেও অধিক। বেশকিছু ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার পুলিশের যারা কর্মকর্তা তাদেরকে দেওয়া আছে, পুলিশ কমিশনারকে দেওয়া আছে। কাজেই পুলিশ কমিশনার আপনাকেই সে দায়িত্ব যোগ্যতার সঙ্গে আন্তরিকতার সঙ্গে নিরপেক্ষতার সঙ্গে পালন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা দৃষ্টি রাখব, কেউ অভিযোগ দিলে আমরা শুনব, সেগুলো তদন্ত করেও দেখব। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হতে হবে। উৎসবমুখর পরিবেশে হতে হবে। আপনাদের মধ্যেও একটা সমঝোতা থাকতে হবে। আপনাদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া থাকতে হবে। যে আমরা কেউ সহিংসতা করব না। কোনো উশৃঙ্খলতা করব না। তাহলেই নির্বাচনটা উৎসবমুখর হতে পারে। আপনারা যদি এমন কিছু আচরণ করেন, যার কারণে যারা ভোটার সাধারণ তারা ভোটকেন্দ্রে যেতে দ্বিধান্নিত হবে, ভিত, আতংকিত হবে। এমন কোনো কার্যক্রম করবেন না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা নিশ্চয়তা দেব। আমাদের তরফ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। যাতে ভোটাররা নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে। তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। আপনারা যেমন আমাদের সহায়তা চাইছেন আমরাও আপনাদের সহায়তা চাই।

প্রার্থীদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, একটা বিষয়ে আপনারা ভুল বুঝবেন না, আমরা যখন সরকার বলি, তখন আওয়ামী লীগকে মিন করি না। সরকার হচ্ছে রাষ্ট্র। যিনি মন্ত্রী উনি মন্ত্রী, যখন উনি দলের তখন উনি দলের। আমরা যখন সরকার বলি তখন ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, ডিসি, এসপি এবং সচিবদের বুঝাই। তারা কিন্তু দল নিরপেক্ষ এবং তাদের দল নিরপেক্ষ হতে হবে। তাদের ওপর আমাদের ডিপেন্ড করতে হবে। তারা নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করতে বাধ্য। নির্বাচন কমিশন যে সহায়তা চাইবে, তারা তা দিতে বাধ্য। এই সরকার বা সরকারের যারা প্রতিনিধি আছে তারা তা দিতে বাধ্য।

ইভিএমের বিষয়ে প্রার্থীদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ইভিএম শুধু রংপুরেই ব্যবহার হয়নি। শত শত জায়গায় ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। রংপুরে হয়তো একটা মেকানিক্যাল (কারিগরি) সমস্যা হতে পারে। বিলম্বিত হয়েছে তবে, কোনো ভোটার তাদের ভোট দিতে পারেনি এমনটা কিন্তু নয়। তাই ইভিএমের ওপর আস্থা রাখুন। ইভিএমে উপস্থিতি কম হতে পারে কিন্তু একজন ভোটার ৫০টা ভোট দিতে পারবে না। এর মাধ্যমেই জনমতের প্রতিফলন ঘটবে এবং জেনোইন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন।

রাজনীতি/আবির