পাঠ্যবই ছাপতে ব্যয় বাড়ল ৭০০ কোটি টাকা The Daily Sylhet The Daily Sylhet প্রকাশিত: ৫:৫৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪ চলতি বছর বিনা মূল্যে পাঠ্যবই ছাপতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বেশি লাগছে। গত বছর বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপতে ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ বছর ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা। এতে বই মুদ্রণে ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বই ছাপায় বিপুল অঙ্কের টাকা বেশি লাগার পেছনে অন্যতম দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, গত বছর ছাপা হয় প্রায় ৩৪ কোটি, কিন্তু এ বছর ছাপা হচ্ছে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ পাঠ্যবই। মূলত নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিকে বিষয় ছিল ১০টি, কিন্তু আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ায় বই হয়ে যাচ্ছে ১৩টি। এছাড়া দশম শ্রেণির জন্য এবার বিশেষভাবে বই করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বই বেশি ছাপতে হচ্ছে। এতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। দ্বিতীয়ত আগের কয়েক বছরে সঠিক মানের বই দেওয়া হতো না। অনেক সময় নিউজপ্রিন্টেও বই ছাপা হতো, যেখানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জেনেশুনেও ছাড় দিত। এতে মুদ্রাকররা নির্ধারিত দরের চেয়ে কম দিয়ে বইয়ের কাজ নিতেন। কিন্তু এবার এনসিটিবি থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনোভাবেই মানহীন বই তারা গ্রহণ করবে না। দরপত্রের স্পেসিফিকেশনে যত শর্ত আছে, তা মানতে হবে। তাই এবার মুদ্রাকররা নির্ধারিত দরের চেয়ে কিছুটা বেশি দর দিয়েছেন। এছাড়া গত বছরের চেয়ে কাগজসহ অন্যান্য সব উপকরণেরই দাম বেড়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২টি পাঠ্য বই ছাপার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকের বই ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫টি। বাকি প্রায় ৩০ কোটির বেশি বই মাধ্যমিক, মাদরাসা ও কারিগরি স্কুলের। সূত্রটি আরও জানায়, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বই ছাপার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে, যা প্রায় ৫ কোটি। আর ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির প্রায় ২০ কোটি বইয়ের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তিও করা হয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির দরপত্রের সব কাজ শেষে ফাইল ক্রয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ফিরে এলেই কার্যাদেশ দেওয়া হবে। নবম শ্রেণির দরপত্র যাচাই-বাছাই চলছে। দশম শ্রেণির দরপত্রের সময়সীমা শেষ হয়েছে। এই চার শ্রেণির ১৫ কোটি বইয়ের কাজ এখনো শুরু হয়নি। এদিকে প্রেস মালিকরা বলছেন, এবার কাগজের দাম প্রতি টন প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। এতে প্রতি ফর্মা কাগজের দাম পড়েছে এক টাকা ৯৪ পয়সা, কাভারের দাম ২৫ পয়সা, প্রিন্টিং ১২ পয়সা, বাইন্ডিং ১৫ পয়সা, কাভার ইউভি বা প্রিন্টিং পাঁচ পয়সা, পরিবহন খরচ পাঁচ পয়সা, ব্যাংক ইন্টারেস্ট আট পয়সা এবং ট্যাক্স বাবদ দিতে হয় ২১ পয়সা। ফলে সব মিলিয়ে প্রতি ফর্মার পেছনে খরচ হয় দুই টাকা ৮৫ পয়সা। আর মাধ্যমিকে প্রতি ফর্মার রেট দেওয়া হয়েছে তিন টাকা বা এর সামান্য কমবেশি। তবে প্রাথমিকে ফোর কালার প্রিন্টিং এবং ৮০ জিএসএম কাগজ হওয়ায় সেখানে রেট আরো কিছুটা বাড়িয়ে তিন টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৪৫ পয়সা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। প্রেস মালিকদের ভাষ্য, গত বছর কাগজের টন ছিল ৯০ হাজার টাকা, ব্যাংক ইন্টারেস্ট ছিল ৯ শতাংশ, যা বর্তমানে ১৬ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। আর্ট কার্ডের দাম গত বছর ছিল ৯০ হাজার টাকা, যা এবার এক লাখ ২৫ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। আর এবার আমরা চাই ভালো মানের বই দিতে, দরপত্রের সব স্পেসিফিকেশন পূরণ করতে। এ জন্য যে দর দেওয়া প্রয়োজন, তা আমরা দিয়েছি। এছাড়া আমাদের প্রেসগুলোতে বছরের তিন মাস কাজ হয়। বাকি সময় বসে থাকতে হয়। কিন্তু স্থায়ী স্টাফদের ছেড়ে দেওয়া যায় না। তাই যদি প্রতি ফর্মায় ১৫ থেকে ২০ পয়সা লাভ করতে না পারি, তাহলে আমাদের অস্তিত্বই টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, এবার সাড়ে ছয় কোটি বই বেড়েছে, বইয়ের ফর্মা বেড়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবে আমরা গত বছরের চেয়ে বেশি টাকা চেয়েছি। এ ছাড়া আমরা এবার মানের দিক দিয়ে কোনো ছাড় দেব না। টাকা কিছুটা বেশি লাগলেও সবচেয়ে ভালো মানের বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেব। তিনি আরও বলেন, প্রেস মালিকরা এবার প্রাক্কলিত দরের চেয়ে বেশি দর দিয়েছেন। অথচ গত বছর তারা অনেক কম দিয়েছিলেন। আমরা তো একটা হিসাব করেই দিই। তারা যদি প্রাক্কলিত দরের মধ্যেই থাকেন, তাহলে কিন্তু কোনো কথা উঠত না। আর তারা যদি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কাজ করেন, সেই ইন্টারেস্টের হিসাব তো আমরা করব না। তবে এ বছর আমাদের হাতে সময় নেই, তাই ফর্মাপ্রতি দর কিছুটা বেশি হলেও পুনঃ দরপত্রে যাওয়া সম্ভব হয়নি।’ শিক্ষাঙ্গন/আবির SHARES শিক্ষাঙ্গন বিষয়: