সুরঞ্জিতের দিরাই-শাল্লায় আলোচনায় নৌকার হাল

প্রকাশিত: ১২:৫৩ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৬, ২০২২

 

অপেক্ষাকৃত রাজনীতিসচেতন নির্বাচনী এলাকা হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখন অনেকটাই শৃঙ্খলাহীন। জাতীয় নেতা প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা সেখানে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই সংসদ সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রায় দেড় বছর হয় নির্বাচনী এলাকাতেই আসতে পারছেন না। তাদের একমাত্র ছেলে সৌমেন সেনগুপ্তও সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। এ অবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে সুরঞ্জিতের এই আসনটির হাল কে ধরবেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিই বা কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে দিরাই-শাল্লায়।

ষাটের দশকের উত্তাল রাজনীতি থেকে উঠে আসা বামপন্থি নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি সিলেট জেলা থেকে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি থেকে জয়ী হন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি পাঁচ নম্বর সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন এবং স্বাধীনতার পর সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

বাংলাদেশে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মোট সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। হয়েছেন মন্ত্রীও। আলোচিত-সমালোচিত এই ব্যক্তিত্ব সর্বশেষ ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে পুনরায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য।
২০১৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বর্ণাঢ্য এই রাজনীতিকের জীবনাবসান ঘটে। তার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে দিরাই-শাল্লায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের শূন্যতা কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন তার স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা।

উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে বছরখানেক সক্রিয়ভাবেই জনপ্রতিনিধিত্ব করেছেন ড. জয়া সেনগুপ্তা। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি এ আসন থেকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। কিন্তু নির্বাচনের কিছুদিন পর থেকেই তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
২০২১ সালের ১৭ মার্চ শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে মামুনুল হকের সমর্থকরা সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়। এরপর সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্টজন ও নাগরিক নেতৃবৃন্দ গেলেও এখনও যেতে পারেননি ড. জয়া সেনগুপ্তা। তবে তার ছেলে সৌমেন সেনগুপ্ত সেখানকার মানুষকে সমবেদনা জানাতে যান।
সম্প্রতি রাজনীতিতে জাতীয় নির্বাচনের আলাপচারিতা শুরু হওয়ার পর প্রশ্ন উঠেছে, এবার সুরঞ্জিতের দিরাই-শাল্লার কাণ্ডারি কে?

দিরাই পৌরসভার মেয়র বিশ্বজিৎ রায় বলেন, দিরাই-শাল্লায় এখনও প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ইমেজকেই কাজে লাগানো হয়। গেল পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও প্রয়াত নেতার কর্মীরা জয়ী হয়েছেন। সুরঞ্জিতের পরিবার থেকে জাতীয় নির্বাচনে কেউ প্রার্থী না হলে, এ আসনে অসংখ্য প্রার্থী মনোনয়ন চাইবেন, দলে বিভক্তি বা বিভাজন বেড়ে যাবে। জয়া সেনগুপ্তাকে আবারও সংসদে দেখতে চান দলীয় কর্মীরা।

জয়া সেনগুপ্তা দেড় বছর হয় এলাকায় না এলেও ভার্চুয়ালি কয়েকবার এলাকাবাসীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন- এ কথা জানিয়ে বিশ্বজিৎ বলেন, সৌমেন একবার এলাকায় এসেছেন। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ তার কম। তাদের কেউই যদি নির্বাচনে না আসেন, তাহলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডকেই বিকল্প প্রার্থীর কথা ভাবতে হবে।

এ প্রসঙ্গে দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়া বলেন, প্রায় দেড় বছর ধরে জয়া সেনগুপ্তা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে না থাকায়, এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ না করায় এবং তাদের ছেলে সৌমেনও প্রবাসে থাকায় দলের কোনো কোনো নেতা জয়া সেনগুপ্তাকে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। এতে দলীয় কোন্দল বাড়ছে, সুরঞ্জিত পরিবারের জনপ্রিয়তাও কমে গেছে।

মোশাররফ মিয়া বলেন, সুরঞ্জিত পরিবার থেকে কেউ প্রার্থিতা না করলে এখানে দিরাইয়ের ভাটিপাড়ার শেখ পরিবারের (শেখ সেলিম সাহেবের) আত্মীয়রা, শাল্লা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলামিন চৌধুরী এবং সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অবনী মোহন দাস প্রমুখ ভোট করতে পারেন।
শাল্লা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু বলেন, জয়া সেনগুপ্তা শারীরিক অসুস্থতার জন্য নির্বাচনে না এলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, শাল্লার সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অবনী মোহন দাস, সাংবাদিক দীপক চৌধুরী, দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র আজিজুর রহমান বুলবুল, ব্যারিস্টার অনুকূল তালুকদার ডাল্টন এবং দিরাইয়ের আওয়ামী লীগ নেতা আলতাব উদ্দিনও মনোনয়ন চাইতে পারেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানও বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন এলাকায় এমপি না থাকায় দিরাই-শাল্লায় দল এবং সরকারের উন্নয়ন কাজের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে গেছে। নিজে সুস্থ থাকলে আগামী নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) এবং সুনামগঞ্জ-৪ (সদর-বিশ্বম্ভরপুর) আসনে মনোনয়ন চাওয়ার ইচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, যে কোনো এক আসনে মনোনয়ন দিলেই জয়ী হবো। তবে অসুস্থতা থাকলে মনোনয়ন চাইবেন না বলেও জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, আমি নিজে অসুস্থ। ছেলে আমেরিকায় আছে, জুন-জুলাইয়ে আসতে পারে। ও না আসা পর্যন্ত নির্বাচন করব-নাকি করব না, বলতে পারছি না। আশা করছি, সংসদের পরবর্তী অধিবেশনের পর দিরাইয়ে গিয়ে কিছুদিন থাকব। অনেকদিন এলাকার মানুষের সঙ্গে থাকা হয়নি।

সিলেট/আবির