সাকিবের ৭ রানের আক্ষেপ

প্রকাশিত: ৫:১৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০২৩

সংক্ষিপ্ত স্কোর- বাংলাদেশ: ৪২ ওভারে ২৫৬/৪ (মুশফিক ২৫*, হৃদয় ৭১*, সাকিব ৯৩, তামিম ৩, লিটন ২৬, শান্ত ২৫)

প্রায় চার বছর পর সেঞ্চুরির সুবাস পাচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান। ২০১৯ সালের ১৭ জুন শেষবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিশ্বকাপে তিন অঙ্কের ঘরে রান করেন। এর মাঝে ২০২১ সালের জুলাইয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সুযোগ পেয়েও ৯৬ রানে বিদায় নেন।

এবারও আক্ষেপে পুড়লেন সাকিব, ৭ রানের জন্য। ৯৩ রানের ইনিংস খেলে থামলেন বাঁহাতি ব্যাটার। ৬৫ বলে ২ চারে পঞ্চাশ করার পর আগ্রাসী হয়ে ওঠেন তিনি। ৩৫তম ওভারে হ্যারি টেক্টরকে পাঁচ চার মেরেছিলেন। এরপর সতর্ক ব্যাটিং করতে থাকেন। ৩৮তম ওভারে গ্রাহাম হিউমের বলে পেছনে লোর্কান টাকারের গ্লাভসে ধরা পড়েন। ৮৯ বলে ৯ চারে সাজানো ছিল তার ইনিংস। ১২৫ বলে ১৩৫ রানের জুটি ভেঙে যায়।

সাকিবের আগ্রাসী ব্যাটিং, হৃদয়ের হাফ সেঞ্চুরি

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ দুটি ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন সাকিব আল হাসান। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও ফিফটির দেখা পেলেন বাঁহাতি ব্যাটার। ৬৫ বলে ৫৩তম হাফ সেঞ্চুরি করলেন সাকিব। চতুর্থ উইকেটে ১০৩ বলে এই জুটির রান একশ ছাড়ায়। ফিফটির পর থেকে আগ্রাসী সাকিব। ৩৫তম ওভারেই হ্যারি টেক্টরকে পাঁচটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। পরের ওভারেই প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে হাফ সেঞ্চুরি করেন হৃদয়। ৫৫ বলে ৫ চারে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডেতে ফিফটির দেখা পেলেন তিনি। নাসির হোসেন ও ফরহাদ রেজার পর তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে অভিষেকে পঞ্চাশ করলেন হৃদয়।

সাকিব আল হাসান ৭ হাজার ওয়ানডে রানের মাইলফলকে নাম লিখলেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২০তম ওভারে কুর্টিস ক্যাম্ফারের শেষ বলে ১ রান নিয়ে এই কীর্তি গড়েন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার। সাত হাজার ছুঁতে ২৪ রান দরকার ছিল সাকিবের।

বোল্ড হয়ে শান্তর ছন্দপতন

নাজমুল হোসেন শান্ত দারুণ ধারাবাহিকতার মধ্যে ছিলেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে তার ছন্দপতন হলো। ১৭তম ওভারে ৮১ রানে ৩ উইকেট হারালো বাংলাদেশ। ৩৪ বলে ১ চারে ২৫ রান করেন শান্ত। তাকে ক্লিন বোল্ড করেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৪২ বলে ৩২ রানের জুটি গড়েন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের সেরা খেলোয়াড়।

ইংলিশদের বিপক্ষে ২-১ এ ওয়ানডে সিরিজ হারলেও দুই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরিতে উজ্জ্বল ছিলেন শান্ত। প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও পান ফিফটি। পরের দুটি ম্যাচে ৪৬ ও ৪৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন।

কুর্টিস ক্যাম্ফার বল হাতে নিয়েই ভেঙে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাসের আশা জাগানিয়া জুটি। দল পঞ্চাশ করার আগেই দ্বিতীয় উইকেটের পতন। দলীয় ৪৯ রানে পল স্টার্লিংয়ের ক্যাচ হন লিটন। ৩১ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ২৬ রান করেন এই ওপেনার। দলীয় ১৫ রানে প্রথম উইকেট পড়ার পর দুজন মিলে ইনিংস মেরামত করছিলেন। ৪২ বলে ৩৪ রানের জুটি গড়েন দুজন।

লিটন-শান্ত হাল ধরেছেন

১৫ রানে প্রথম উইকেট হারানো বাংলাদেশের হাল ধরেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও ওপেনার লিটন দাস। তামিম ইকবাল মাঠ ছাড়ার আগের ওভারে চার মেরেছিলেন লিটন। ইনিংসের প্রথম ছক্কাও মারেন তিনি। তামিমকে ফেরানো মার্ক অ্যাডায়ারের বল বাউন্ডারিতে উড়ান এই ব্যাটার।

তামিম ইকবাল ব্যাটিংয়ে হতাশ করলেন। মাত্র ৩ রান করে মার্ক অ্যাডায়ারের বলে স্লিপে পল স্টার্লিংকে ক্যাচ দেন তিনি। ৯ বলের ইনিংসে ছিল না কোনও চার। তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে ১৫ রানে প্রথম উইকেট হারালো বাংলাদেশ।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ওয়ানডের সিরিজে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন তামিম। আয়ারল্যান্ড সিরিজেও অধিনায়কের শুরুটা হলো হতাশায়। দুই অঙ্কের ঘরেই যেতে পারেননি তিনি।

ওয়ানডেতে হৃদয়ের অভিষেক

তৌহিদ হৃদয় পেলেন ওয়ানডে ক্যাপ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন টি-টোয়েন্টি খেলা এই ব্যাটারকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে রেখেছে বাংলাদেশ। চোখে আঘাত লেগে প্রত্যাশিতভাবে এই ম্যাচে খেলা হচ্ছে না মেহেদী হাসান মিরাজের।

বাংলাদেশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম (উইকেটকিপার), সাকিব আল হাসান, ইয়াসির আলী রাব্বি, তৌহিদ হৃদয়, তাসকিন আহমেদ, ইবাদত হোসেন, নাসুম আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান।

আয়ারল্যান্ড: পল স্টার্লিং, স্টিফেন ডোহানি, অ্যান্ডি বালবির্নি (অধিনায়ক), গ্যারেথ ডিলানি, হ্যারি টেক্টর, লোর্কান টাকার (উইকেটকিপার), জর্জ ডকরেল, কুর্টিস ক্যাম্ফার, অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন, মার্ক অ্যাডায়ার, গ্রাহাম হিউম।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড প্রথম ওয়ানডেতে মুখোমুখি হচ্ছে। এই ম্যাচে টসে হেরেছে বাংলাদেশ। টসে জিতে আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবির্নি বোলিং নিয়েছেন। স্বাগতিকরা আগে ব্যাটিং করবে।

আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে চায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবারের পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে এসেছে আয়ারল্যান্ড। যদিও ২০০৮ সালে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে ঢাকায় এসেছিল আইরিশরা। এরপর ২০১১ সালের বিশ্বকাপেও ঢাকায় একটি ম্যাচ খেলেছিল। সবগুলো ম্যাচেই শেষ হাসি হেসেছিল বাংলাদেশ। এর বাইরে নিজেদের হোম গ্রাউন্ডে আয়ারল্যান্ড খেলেছে সাতটি ম্যাচ। ওই সাত ম্যাচের মধ্যে আইরিশরা দুটি ম্যাচ জিতলেও, বাংলাদেশ জিতেছে তিনটি এবং বাকি দুটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে।

এদিকে আয়ারল্যান্ডের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স দুর্দান্ত। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে হারানোর ইতিহাস আছে দলটির। ২০২১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে স্বাগতিদের হারিয়ে দিয়েছিল আইরিশরা। অ্যান্ডি বালবির্নির অসাধারণ সেঞ্চুরিতে (১০২) আগে ব্যাটিং করে ২৯০ রান করেছিল আয়ারল্যান্ড। ব্যাটিংয়ের পর অসাধারণ বোলিং করে জয় ছিনিয়ে আনে সফরকারীরা। পরের বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েও সাফল্য পায় আইরিশরা। কিংসটাউনে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জেতে ২-১ ব্যবধানে। চলতি বছর জিম্বাবুয়ে সফরে গিয়ে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ড্র করে আয়ারল্যান্ড। সবকিছু মিলিয়ে মোটামুটি ভালো অবস্থানেই আছে তারা। তার মধ্যে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে শামীম-সৌম্য-ইয়াসিরদের নিয়ে গড়া দলকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বর বালবির্নির দল। নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।

খেলা/আবির