সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা

প্রকাশিত: ৩:২২ অপরাহ্ণ, জুলাই ১, ২০২৪

 

সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ নিয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছেন দেশের ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

আজ সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির শুরু করেছেন তারা। এর ফলে বন্ধ হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা-কার্যক্রম।

শিক্ষকরা বলছেন, বৈষম্যমূলক ও মর্যাদাহানিকর প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার, শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলবে।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন ফটকে সংবাদ সম্মেলনে কর্মবিরতির এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া। তারপর দেশের ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একে একে কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, আমরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে আজ থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেছি। সারা দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এতে একাত্মতা ঘোষণা করে কর্মবিরতি শুরু করেছেন। সরকারের কাছে আমরা তিনটি দাবি জানিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।

ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক সমিতি উদ্যোগে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি সকাল থেকে শুরু হয়েছে। এই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন এই ইউনিভার্সিটির শিক্ষক সমিতির আহবায়ক শামসুদ্দিন আহমেদ, যুগ্ন আহ্বায়ক মোঃ সানাউল্লাহ ও সদস্য মশিউর রহমান।

একই কর্মসূচি পালন করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।

কর্মবিরতি পালন করেছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাবৃন্দ। সোমবার (১ জুলাই ২০২৪) সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২৩লা একাডেমিক ভবনের সামনে মাভাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির আয়োজনে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়। সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সকল বিভাগের ক্লাসসমূহ বন্ধ রাখা হয়। অফিসের সকল অ্যাকাডেমিক এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতি ও কর্মচারী কল্যাণ সমিতির আহবানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে আজ থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পূর্ণদিবস কর্মবিরতির কারনে সকাল থেকে কোন ক্লাশ ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।

এদিকে জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে জাবি অফিসার সমিতি ও রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে কর্মচারী কল্যাণ সমিতি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞাপন ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মবিারতি পালন করা হয়েছে। কর্মসূচি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ছফি উল্লাহ ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আল মামুনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

প্রবাসী, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা এই চারটি প্রকল্প নিয়ে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প যাত্রা শুরু করে। পরে সব স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামে একটি নতুন স্কিম চালু করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গত ১৩ মার্চ প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

স্কিমটি প্রত্যাহারের দাবিতে বেশ কর্মসূচি পালনের পর গত ৪ জুন প্রথম অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। এরপরও দাবির বিষয়ে সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গত সপ্তাহে টানা তিন দিন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

একই দাবিতে গত সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটেও শিক্ষক নেতারা জোরালো বক্তব্য দেন।

সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা মোট তিনটি দাবি জানিয়েছেন। এগুলো হলো- প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন।

তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি শুধু প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন বাতিল।

 শিক্ষাঙ্গন/আবির