শাল্লায় হামলার ঘটনায় ডক্টর শামছুল হক চৌধুরী তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

প্রকাশিত: ৫:২২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০২১

স্টাফ রিপোর্ট:

সুনামগঞ্জের শাল্লার একটি গ্রামে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান ডক্টর শামছুল হক চৌধুরী এবং তিনি বলেন, অবিলম্বে দুস্কৃতি কারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এসময় তিনি আরো বলেন, দিরাই ও শাল্লাবাসী সবসময় নিরাপদে থাকুক আমি এই প্রত্যাশা করি।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য, যুক্তরাজ্য জাতীয় শ্রমিক লীগ এর কার্যকরী সভাপতি ডক্টর শামছুল হক চৌধুরী।

শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ ওই গ্রামে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫ মার্চ দিরাই উপজেলা সদরে হেফাজতে ইসলামের একটি সমাবেশ ছিল। এতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হকসহ অন্য নেতারা বক্তব্য দেন। ওই রাতে মামুনুল হককে নিয়ে শাল্লা উপজেলার ঝুমন দাস ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেন—এমন অভিযোগ তুলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

পরের দিন মঙ্গলবার রাতে পুলিশ শাল্লার শ্বাসখাই বাজার থেকে ঝুমনকে আটক করে। ফেসবুক পোস্টের জের ধরে ১৭ মার্চ সকাল ৯টার দিকে নোয়াগাঁওয়ের আশপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে লাঠিসোঁটা নিয়ে ওই গ্রামে গিয়ে হামলা চালান। এ সময় নোয়াগাঁও গ্রামের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় ওই গ্রামের লোকজন আগেই বাড়িঘর ছেড়ে পাশের গ্রাম ও হাওরে আশ্রয় নেন।
নোয়াগাঁও গ্রামের একাধিক বাসিন্দার ভাষ্য, আজ সকাল থেকে আশপাশের অন্তত চার গ্রামের মানুষ জড়ো হয়ে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলার প্রস্তুতি নেন। এর মধ্যে কাশিপুর, দিরাই উপজেলার নাসনি, চণ্ডীপুর ও সন্তোষপুর গ্রামের লোকজন ছিলেন। হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। কয়েকটি ঘরের জিনিসপত্রও নিয়ে গেছেন হামলাকারীরা। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর মানুষ বাড়িতে ফিরে আসেন। গ্রামের মানুষজন ভয়-আতঙ্কে আছেন।

খবর পেয়ে শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিন চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মুক্তাদির হোসেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক ঘটনাস্থলে যান। এরপর স্থানীয় লোকদের নিয়ে বৈঠক করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবার সহযোগিতা চান।

শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, ফেসবুকে হেফাজত নেতাকে নিয়ে উসকানিমূলক পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ঝুমনকে আটক করা হয়েছে। নোয়াগাঁও গ্রামের পরিস্থিতি এখন শান্ত। কয়েকটি ঘরের বেড়া ও আসবাব ভাঙচুর করা হয়েছে। গ্রামে পুলিশ মোতায়েন আছে। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। আটক ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মুক্তাদির হোসেন বলেন, উপজেলার কয়েকটি জায়গায় উত্তেজনা ছিল। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। র‍্যাব-পুলিশ কাজ করছে। তিনি আশা করেন আর কোনো সমস্যা হবে না। নোয়াগাঁও গ্রামে লোকজনের কী কী ক্ষতি হয়েছে, সেটি প্রশাসন খতিয়ে দেখছে বলে তিনি জানান।

ফেসবুকে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে দেয়া একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে গত ১৭ মার্চ শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামের ৮৮টি হিন্দুবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এ ঘটনায় ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় থানায় পৃথক দুইটি মামলা করা হয়। নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর পক্ষে একটি মামলা করেন হবিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল। অন্য মামলাটি করেন শাল্লা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল করিম।

প্রধান আসামি ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম স্বাধীন মিয়াসহ ২৯ জনের রিমান্ড শুরু হয়েছে। (২৭ মার্চ) থেকে তাদের রিমান্ডে নেয়া শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাদের রিমান্ড শেষ করা হবে।সুনামগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মো. সেলিম নেওয়াজ আদালত ১৫ দিনের মধ্যে সবার রিমান্ড শেষ করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। শনিবার থেকে পুলিশ আসামিদের রিমান্ড শুরু করেছে।

গত ২৩ মার্চ আদালত গ্রেফতারকৃত ২৯ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর মধ্যে ইউপি সদস্য স্বাধীনকে ৫ দিন এবং বাকি ২৮ আসামির ২ দিন করে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন আদালত।
তবে সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দুদের গ্রাম নোয়াগাঁওয়ে হেফাজত অনুসারীদের হামলা ও লুটপাটে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীকে সহায়তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতনিধিদল ঘটনাস্থলে এসে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। পরে গ্রামবাসীকে চাল, ডাল, তেলসহ নগদ সহায়তা দেন তারা। গ্রামের আটটি ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরেও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়।

এদিকে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় গ্রামের নির্যাতিত পরিবারের নারী নিভা রাণী দাশ আদালতে ৭২ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনাতা ২০০০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি সুনামগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাল্লা জোনের বিচারক শ্যামকান্ত সিনহার আদালতে এই মামলা দায়ের করেন। আদালত বাদীর সঙ্গে কথা বলে মামলাটি ডিবি পুলিশকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ২৫ মার্চ নিভা রানী দাস এই মামলাটি স্থানীয় থানায় দায়ের করলেও থানা মামলাটি গ্রহণ করেনি। তাই বাদী আদালতে মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান।

কিছুদিন পর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল ও এলাকার সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অনুদান প্রদান করা হয়েছে।

ঊক্ত ঘটনায় শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই ঘটনায় দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলামকে মৌলভীবাজার জেলায় বদলি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শাল্লা থানার ওসি নাজমুল হককে সাময়িক বরখাস্ত ও দিরাই থানার ওসি আশরাফুল ইসলামকে মৌলভীবাজারে বদলি করা হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়েছিল।

এ ব্যাপারে সিলেট পুলিশ রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমেদ, পিপএম জানান, শাল্লা উপজেলায় হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে হামলার ঘটনায় শাল্লার থানার ওসি ও দিরাই থানার ওসির দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে। সে জন্য শাল্লা থানার ওসি নাজমুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করে বরিশাল রেঞ্জে সংযুক্ত হতে নির্দেশ দেওয়া হয় এবং দিরাই থানার ওসি আশরাফুল ইসলামে মৌলভীবাজার জেলায় বদলি করা হয়েছে।

পরিশেষে ডক্টর শামছুল হক চৌধুরী বলেন, আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি মানব সেবা করতে হলে জনপ্রতিনিধি হওয়া লাগে না। মানব সেবা কে আমি ইবাদত মনে করি। আমি নিজ উদ্যেগে অনেক সমাজসেবা মুলক কাজ করেছি, স্কুল, মসজিদ মাদ্রাসাসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সামছুল চৌধুরী জানান, সুনামগঞ্জ-২, আসনে গত দুই টার্মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ পদের জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তিনি। কিন্তু তিনি শেখ হাসিনার নির্দেশকে মেনে নিয়ে নির্বাচন থেকে সড়ে দাড়ান।

তিনি পারিবারিকভাবেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক। তাই ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে এই আদর্শের পথে আমার যাত্রা শুরু/অতীতে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং ১/১১ থেকে শুরু করে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রলীগের লড়–ক সৈনিক হিসেবে অধ্যাবধী দেশে ও প্রবাসে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্টায় কাজ করেছেন।

ছাত্রজীবনের পর থেকে পারিবারিক প্রয়োজনে দেশের বাহিরে অবস্থান করলেও সেখানে থেকেও তার রাজনৈতিক তৎপরতা থেমে থাকেনি। এলাকার মানুষের উন্নয়নে বিভিন্ন সড়ক নিমার্ণসহ স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দিরের উন্নয়নে কাজ করেছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কর্মকান্ডে ছাত্রজীবন থেকে দীর্ঘ প্রায় ৩৪ বৎসর যাবৎ আওয়ামী রাজনীতি ও বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সংগঠনের সাথে অতপ্রোতভাবে জড়িত থেকে এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।

আগামীতে দিরাই-শাল্লাবাসীকে সাথে নিয়ে বর্তমান সরকারের গ্রামকে আধুনিক নগর সুবিধা প্রদানে দুই উপজেলার প্রতিটি গ্রামকে হবে শহরে রুপান্তরিত করার জন্য কাজ করে যাবেন। এছাড়া কৃষি নির্ভর এই দুই উপজেলার কৃষকদের আধুনিক কৃষকে তৈরী এবং প্রযুক্তির ব্যবহার ও কৃষককে প্রযুক্তিবান্ধব করার পরিকল্পনাকে এই বিনিয়োগের আওতায় আনার জন্য মহাপরিকল্পনাও রয়েছে তার।