যাকাত দেওয়ার উপযুক্ত সময় রমজান

প্রকাশিত: ৮:৫৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২৪

 

ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি যাকাত। রাসুল (সা.) বলেন, পাঁচটি বিষয়ের ওপর ইসলামের ভিত্তি-এক. এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই আর নিশ্চয়ই মোহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ও রাসুল; দুই. সালাত কায়েম করা; তিন. যাকাত আদায় করা; চার. হজ করা ও পাঁচ. রমজানেরোজা রাখা। (সহিহ বুখারি)।

সামর্থ্যবান মানুষের সম্পদে গরিব-দুঃখীদের জন্য যে ন্যায্য অধিকার নির্ধারণ করেছে ইসলাম-সেটাই জাকাত। জাকাতকে ইসলামি অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি গণ্য করা হয়। রমজান মাসে রোজা রাখলে যেমন দেহ ও মন পবিত্র হয়, তেমনি যথানিয়মে পরিপূর্ণভাবে জাকাত আদায় করলে মানুষের উপার্জিত সম্পদ পবিত্র হয়। এজন্য বলা হয়, দেহের যাকাত রোজা আর সম্পদের জাকাত দান-সদকা।

কুরআনে অসংখ্যবার সালাত ও যাকাতের আদেশ করা হয়েছে। রাসুল (সা.) জাকাতের নানা উপকার ও ফজিলত বর্ণনা করে মুমিন মুত্তাকিদের জাকাতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা সালাত আদায় কর এবং জাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য আগে প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখছেন। (সূরা বাকারা : ১১০)।

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘এবং যারা সালাত আদায় করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ইমান রাখে আমি তাদের মহাপুরস্কার দিব।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন; কিন্তু সে তার জাকাত দেয়নি; কিয়ামতের দিন তা বিষধর সাপ হয়ে উপস্থিত হবে এবং তা তার গলায় প্যাঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার উভয় অধর প্রান্তে দংশন করবে এবং বলবে, আমিই তোমার ওই ধন, আমিই তোমরা পুঞ্জীভূত সম্পদ।’ (সহিহ বুখারি)।

ইসলামে সমাজের দরিদ্র জনসাধারণের আর্থিক প্রয়োজনের ব্যাপকতার প্রতি লক্ষ রেখে তৃতীয় হিজরিতে ধনীদের ওপর জাকাত ফরজ করা হয়েছে। সমাজে ধনসম্পদের আবর্তন ও বিস্তার সাধন এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের মহান উদ্দেশ্যেই জাকাতব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। দারিদ্র্য বিমোচন ও বেকার সমস্যা সমাধানই জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য।

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত জাকাত বণ্টনের খাতগুলোর প্রতি লক্ষ করলে এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। আল্লাহ বলেন, ‘সাদকা বা জাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত, জাকাত আদায়কারী কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্তাকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্ত ব্যক্তিদের, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী ও মুসাফিরদের জন্য; এটা আল্লাহর বিধান।’ (সুরা আত-তাওবা, আয়াত ৬০)।

ধনী লোকদের ধনসম্পদের ৪০ ভাগের এক অংশ অসহায় দরিদ্রদের মধ্যে জাকাত হিসাবে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ইসলামে। জাকাত দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়ের বাধ্যবাধকতা না-থাকলেও রমজান মাসই জাকাত আদায়ের সর্বোত্তম সময়। রমজান মাসে যেকোনো ধরনের দান-সাদকা করলে অন্য সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি নেকি হাসিল হয়।

যদি কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য একটি নফল ইবাদত করেন, তবে তিনি মাহে রমজানে একটি ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব পাবেন। যিনি একটি ফরজ আদায় করবেন, তিনি অন্যান্য মাসের ৭০টি ফরজের সমান সওয়াব পাবেন। তাই রমজান মাসে মুমিন বান্দার জন্য জাকাত আদায়ের মোক্ষম সময়।

বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত দারিদ্র্যের থাবা বিস্তৃত হচ্ছে। আগামীর বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ক্ষুধা ও দারিদ্র্য। তাই ধনী ও দরিদ্রের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ ও একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সর্বোপরি আল্লাহর বিধান পালনের উদ্দেশ্যে সামর্থ্যবান সবাইকে জাকাত আদায়ে আরও বেশি আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। আল্লাহতায়ালা আমাদের সেই তাওফিক দিন। আমিন।

আসলে এই যে যাকাত; যাকাতের যে গুরুত্ব আমরা অধিকাংশ এই গুরুত্বকে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হই। অধিকাংশই এই গুরুত্বটাকে অনুভব করি না যে আসলে কোরআনে এই যাকাতকে কতটা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে!

কোরআনে ইসলামের তিনটি স্তম্ভ- ঈমান বিশ্বাস নামাজ ও যাকাতের কথা বার বার একসাথে বলা হয়েছে। নামাজ এবং যাকাতের কথা কোরআনের ১৬টি সূরায় ২৮ বার একসাথে বলা হয়েছে।

এবং এইজন্যে হিজরি অষ্টম শতকের বিখ্যাত আলেম ইমাম আল ইরাকী খুব সুন্দরভাবে বলেছেন- যারা ঈমান নামাজ এবং যাকাত এই তিনটি স্তম্ভের আন্তরিক যত্ন নেবে তারা রোজা ও হজ পালন করতে পারবেন অনায়াসে।

এবং যাকাত কত গুরুত্বপূর্ণ! হিজরি নবম শতকের ইমাম আল আয়ানী তিনি যাকাতকে নামাজের অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, যাকাত ছাড়া নামাজ নিষ্ফল।

আসলে আমরা অনেক নামাজীই যে নামাজের সাথে সাথে যাকাতের যে গুরুত্ব এই গুরুত্ব অনুধাবন করি না। এবং যে কারণে যাকাত আদায়ে আমাদের যে আন্তরিক তৎপরতা হওয়া উচিত সে আন্তরিক তৎপরতার অভাব ঘটে। যেহেতু আমরা আসলে যাকাত যে এত গুরুত্বপূর্ণ যাকাত না দিলে যাকাত আদায় না করলে যে নামাজ নিষ্ফল এটা আমরা বুঝি না।

যারা বলেছিল- নামাজ কায়েম করব কিন্তু যাকাত দেবো না, খলিফারা তাদের মুসলমান বলে গণ্য করেন নি…
আপনি দেখেন আবু বকর যখন খলিফা হলেন নবীজীর (স) ওফাতের পরে; তখন আরবের বিভিন্ন অংশের অনেক ইসলাম গ্রহণকারী তারা যাকাত দিতে অস্বীকার
করেছিল। বলে যে, আমরা নামাজ পড়ব; আমরা বিশ্বাস ঈমান সব ঠিক আছে; নামাজ কায়েম করব কিন্তু যাকাত দেবো না।

খলিফা আবু বকর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। এবং খলিফারা তাদের মুসলমান বলে গণ্য করেন নি।

আসলে একজন মুসলমানের জন্যে নামাজ কায়েমের সাথে সাথে যাকাত আদায়ের যে গুরুত্ব এ ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন নাই।

আসলে যিনি নামাজ পড়েন তিনি অবশ্যই তার হিসাব করে যাকাত আদায় করা উচিৎ। যাকাত আপনি যত আদায় করবেন আল্লাহর রহমত এবং বরকত তত আপনার ওপর নাজিল হতে থাকবে।

এই রমজান মাসে যাকাত আদায় করা সবচেয়ে বেশি সওয়াবের সবচেয়ে বেশি পুণ্যের।

অতএব যাদেরই সুযোগ রয়েছে এই রমজান মাসেই যাকাত আদায় করে আপনার বিশ্বাসের ভিত্তি এবং আপনার নামাজকে ফলপ্রসূ করতে আন্তরিকভাবে তৎপর হওয়া উচিৎ।

ধর্ম/আবির