বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিখ্যাত পাঁচ কবিতা The Daily Sylhet The Daily Sylhet প্রকাশিত: ৪:৩৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০২২ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে যুগে যুগে রচিত হয়েছে বহু কবিতা। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে তাকে নিয়ে রচিত বিখ্যাত ৫ কবিতা পূর্বপশ্চিমের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে অন্নদাশঙ্কর রায় নরহত্যা মহাপাপ, তার চেয়ে পাপ আরো বড়ো করে যদি যারা তাঁর পুত্রসম বিশ্বাসভাজন জাতির জনক যিনি অতর্কিত তাঁরেই নিধন। নিধন সবংশে হলে সেই পাপ আরো গুরুতর, . সারাদেশ ভাগী হয় পিতৃঘাতী সে ঘোর পাপের যদি দেয় সাধুবাদ, যদি করে অপরাধ ক্ষমা। কর্মফল দিনে দিনে বর্ষে বর্ষে হয় এর জমা একদা বর্ষণ বজ্ররূপে সে অভিশাপের। . রক্ত ডেকে আনে রক্ত, হানাহানি হয়ে যায় রীত। পাশবিক শক্তি দিয়ে রোধ করা মিথ্যা মরীচিকা। পাপ দিয়ে শুরু যার নিজেই সে নিত্য বিভীষিকা। ছিন্নমস্তা দেবী যেন পান করে আপন শোণিত। . বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! থেকো নাকো নীরব দর্শক ধিক্কারে মুখর হও। হাত ধুয়ে এড়াও নরক। . অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছড়া . যত দিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান তত দিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান। . দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা রক্তগঙ্গা বহমান নাই নাই ভয়, হবে হবে জয় জয় মুজিবুর রহমান। . ধন্য সেই পুরুষ শামসুর রাহমান . ধন্য সেই পুরুষ নদীর সাঁতার পানি থেকে যে উঠে আসে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে; ধন্য সেই পুরুষ, নীল পাহাড়ের চূড়া থেকে যে নেমে আসে প্রজাপতিময় সবুজ গালিচার মত উপত্যকায়; ধন্য সেই পুরুষ হৈমন্তিক বিল থেকে যে উঠে আসে . রঙ বেরঙের পাখি ওড়াতে ওড়াতে। ধন্য সেই পুরুষ কাহাতের পর মই-দেয়া ক্ষেত থেকে যে ছুটে আসে ফসলের স্বপ্ন দেখতে দেখতে। . ধন্য আমরা, দেখতে পাই দূরদিগন্ত থেকে এখনো তুমি আসো, আর তোমারই প্রতীক্ষায় ব্যাকুল আমাদের প্রাণ, যেন গ্রীষ্মকাতর হরিণ জলধারার জন্যে। তোমার বুক ফুঁড়ে অহংকারের মতো ফুটে আছে রক্তজবা, আর আমরা সেই পুষ্পের দিকে চেয়ে থাকি, আমাদের চোখের পলক পড়তে চায় না, অপরাধে নত হয়ে আসে আমাদের দুঃস্বপ্নময় মাথা। . দেখ, একে একে সকলেই যাচ্ছে বিপথে অধঃপাত মোহিনী নর্তকীর মতো জুড়ে দিয়েছে বিবেক-ভোলানো নাচ মনীষার মিনারে, বিশ্বস্ততা চোরা গর্ত খুঁড়ছে সুহৃদের জন্যে সত্য খান খান হয়ে যাচ্ছে যখন তখন কুমোরের ভাঙ্গা পাত্রের মতো, চাটুকারদের ঠোঁটে অষ্টপ্রহর ছোটে কথার তুবড়ি, দেখ, যে কোন ফসলের গাছ সময়ে-অসময়ে ভরে উঠেছে শুধু মাকাল ফলে। ঝলসে-যাওয়া ঘাসের মত শুকিয়ে যাচ্ছে মমতা দেখ, এখানে আজ কাক আর কোকিলের মধ্যে কোনো ভেদ নেই। নানা ছলছুতোয় . ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর রৌদ্র ঝরে চিরকাল, গান হয়ে নেমে আসে শ্রাবণের বৃষ্টিধারা, যাঁর নামের ওপর কখনো ধুলো জমতে দেয় না হাওয়া, ধন্য সেই পুরুষ যাঁর নামের উপর পাখা মেলে দেয় জ্যোৎস্নার সারস, ধন্য সেই পুরুষ যাঁর নামের উপর পতাকার মতো দুলতে থাকে স্বাধীনতা, ধন্য সেই পুরুষ যাঁর নামের ওপর ঝরে মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধ্বনি। . স্বৈরাচারের মাথায় মুকুট পরাচ্ছে ফেরেব্বাজের দল। দেখ, প্রত্যেকটি মানুষের মাথা তোমার হাঁটুর চেয়ে এক তিল উঁচুতে উঠতে পারছে না কিছুতেই। তোমাকে হারিয়ে আমরা সন্ধ্যায়, হারিয়ে যাওয়া ছায়ারই মতো হয়ে যাচ্ছিলাম, আমাদের দিনগুলি ঢেকে যাচ্ছিল শোকের পোশাকে, তোমার বিচ্ছেদের সংকটের দিনে আমরা নিজেদের ধ্বংসস্তূপে বসে বিলাপে ক্রন্দনে আকাশকে ব্যথিত করে তুললাম ক্রমাগত; তুমি সেই বিলাপকে রূপান্তরিত করেছো জীবনের স্তুতিগানে, কেননা জেনেছি – জীবিতের চেয়েও অধিক জীবিত তুমি। . স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো নির্মলেন্দু গুণ . একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি?’ . এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না, এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না, এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না৷ তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি? তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হদৃয় মাঠখানি? . জানি, সেদিনের সব স্মৃতি ,মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত কালো হাত৷ তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ কবির বিরুদ্ধে কবি, মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ, বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল, উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান, মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ … ৷ . হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি, শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প৷ সেই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর৷ না পার্ক না ফুলের বাগান, — এসবের কিছুই ছিল না, শুধু একখন্ড অখন্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিত ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়৷ আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল এই ধু ধু মাঠের সবুজে৷ . কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক, লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক, পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক৷ হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুণ কেরানী, নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা, ভবঘুরে আর তোমাদের মত শিশু পাতা-কুড়ানীরা দল বেঁধে৷ একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কী ব্যাকুল প্রতীক্ষা মানুষের: “কখন আসবে কবি?’ “কখন আসবে কবি?’ . শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে, রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে অত:পর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন৷ তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল, হদৃয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা৷ কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী? গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর-কবিতাখানি: ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম৷’ .সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের৷ পনেরো আগস্ট সৈয়দ শামসুল হক এখনও রক্তের রঙ ভোরের আকাশে। পৃথিবীও বিশাল পাখায় গাঢ় রক্ত মেখে কবে থেকে ভাসছে বাতাসে। অপেক্ষায়- শব্দের- শব্দেই হবে সে মুখর- আরো একবার জয় বাংলা ধ্বনি লয়ে যখন সূর্যের আলো তার পাখায় পড়বে এসে ইতিহাস থেকে আরো কিছুক্ষণ পরে। মানুষ তো ভয় পায় বাক্হীন মৃত্যুকেই, তাই ওঠে নড়ে থেকে থেকে গাছের সবুজ ডাল পাতার ভেতরে। পাতাগুলো হাওয়া পায়, শব্দ করে ওঠে আর খাতার পাতাও ধরে ওঠে অস্থিরতা- কখন সে পাবে স্বর- জয় বাংলা ঝড়- তাকে দাও জন্মনাভি! বোঁটা থেকে দ্যাখো আজও অভিভূত রক্ত যায় ঝরে বাঙালির কলমের নিবের ভেতরে। স্তব্ধ নয় ইতিহাস! বাংলাও সুদূরগামী তেরোশত নদীর ওপরে ওই আজও তো নৌকোয় রক্তমাখা জনকের উত্থান বিস্ময়! . এই সিঁড়ি রফিক আজাদ এই সিঁড়ি নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে, সিঁড়ি ভেঙে রক্ত নেমে গেছে – বত্রিশ নম্বর থেকে সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে অমল রক্তের ধারা বয়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে। . মাঠময় শস্য তিনি ভালোবাসতেন, আয়ত দু’চোখ ছিল পাখির পিয়াসী, পাখি তাঁর খুব প্রিয় ছিল – গাছ-গাছালির দিকে প্রিয় তামাকের গন্ধ ভুলে চোখ তুলে একটুখানি তাকিয়ে নিতেন, পাখিদের শব্দে তাঁর, খুব ভোরে, ঘুম ভেঙে যেত। স্বপ্ন তাঁর বুক ভরে ছিল, পিতার হৃদয় ছিল, স্নেহের-আর্দ্র চোখ – এ দেশের যা-কিছু তা হোক না নগণ্য, ক্ষুদ্র তাঁর চোখে মূল্যবান ছিল – নিজের জীবনই শুধু তাঁর কাছে খুব তুচ্ছ ছিল; স্বদেশের মানচিত্র জুড়ে পড়ে আছে বিশাল শরীর … . তাঁর রক্তে এই মাটি উর্বর হয়েছে সবচেয়ে রূপবান দীর্ঘাঙ্গ পুরুষ তাঁর ছায়া দীর্ঘ হতে হতে মানচিত্র ঢেকে দ্যায় সস্নেহে আদরে তাঁর রক্তে প্রিয় মাটি উর্বর হয়েছে – তাঁর রক্তে সবকিছু সবুজ হয়েছে। . এই সিঁড়ি নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে, সিঁড়ি ভেঙে রক্ত নেমে গেছে – স্বপ্নের স্বদেশ ব্যেপে সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে অমল রক্তের ধারা বয়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে। জাতীয়/আবির SHARES সারা দেশ বিষয়: