‘পাংকু জামাই’র বিনিময়ে ‘পাঠান’: অভিযোগের বিপরীতে ‘নিয়ম’ দেখালেন মামুন The Daily Sylhet The Daily Sylhet প্রকাশিত: ৪:৪৯ অপরাহ্ণ, মে ৮, ২০২৩ মোটের ওপর চারদিন বাকি। এরপর দেশের সিনেমায় রচিত হবে নতুন অধ্যায়। মুক্তি পাবে বলিউডের ছবি ‘পাঠান’। শাহরুখ খান অভিনীত এই ছবি মুক্তির জন্য ইতোমধ্যে সবরকম প্রস্তুতি সম্পন্ন। চলছে হল বুকিং। শোনা যাচ্ছে, প্রথম সপ্তাহ গোটা পঞ্চাশেক হলে ঢুকবেন বলিউড বাদশাহ। তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী উপমহাদেশীয় কোনও ছবি আমদানি করলে তার বিপরীতে সেই দেশে ঢাকার একটি ছবি রফতানি করতে হবে। বাংলা ট্রিবিউনের অনুসন্ধানে খবর মিলেছে, বহু আগে রফতানি করা ‘পাংকু জামাই’র বিনিময়েই দেশে এসেছে ‘পাঠান’। যা সিনেমাপ্রেমী দর্শক ও ইন্ডাস্ট্রির মানুষকে অবাক ও হতাশ করেছে! শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস অভিনীত ‘পাংকু জামাই’ দেশে মুক্তি পেয়েছিল ২০১৮ সালের ১৬ জুন। মানহীন গল্প-নির্মাণের কারণে এটি শাকিবের ক্যারিয়ারে অন্যতম ফ্লপ হিসেবে বিবেচিত। সে কারণে প্রশ্ন উঠছে, সাম্প্রতিক সময়ের সফল ও মানসম্পন্ন ছবি থাকা সত্ত্বেও পুরনো-মানহীন ‘পাংকু জামাই’র বিনিময়ে কেন বিশ্বজুড়ে ঝড় তোলা ‘পাঠান’ আমদানি করতে হলো? এ প্রশ্নের জবাবে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দুদিন আগে ‘চেপে যাওয়ার’ কৌশল অবলম্বন করেন ‘পাঠান’র আমদানিকারক (অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্টের কর্ণধার) অনন্য মামুন। এমনকি মন্ত্রণালয় থেকেও কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু প্রশ্ন-অভিযোগের বৃষ্টি থেমে নেই। অগত্যা জবাবের ছাতা মেলতেই হলো মামুনকে। লম্বা বক্তব্যে কারণ হিসেবে দেখালেন ‘নিয়মের বেড়াজাল’। দাঁড় করানোর চেষ্টা করলেন ভাঙা যুক্তি। সোমবার (৮ মে) মামুন জানালেন, বছর চারেক আগেই ‘পাংকু জামাই’ ভারতে রফতানি করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে নাকি ছবিটি মুক্তিও দিয়েছিলেন! সেটার বিপরীতে কলকাতার বড় কোনও ছবি আমদানির পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু করোনা মহামারির ধাক্কায় সেটা আর করতে পারেননি। এরপর দেখালেন সিনেমা আমদানি-রফতানিতে সরকারি নিয়মের জটিলতার খতিয়ান। অনন্য মামুনের ভাষ্য, ‘দেশে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা রফতানির জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। তথ্য মন্ত্রণালয় অনাপত্তি দিলে সেটা আপনি রফতানি করতে পারবেন। এরপর ভারতের প্রযোজক এলসি বা টিটির মাধ্যমে বাংলাদেশে টাকা পাঠাবে, তারপরে ছবিটা রফতানি হবে। যখন আপনি একটি ছবি রফতানি করলেন, সেই কাগজপত্র জমা দিয়ে আপনাকে একটি ছবি আমদানির জন্য আবেদন করতে হবে। তথ্য মন্ত্রণালয় সেটা নিয়ে মিটিং করবেন, সেই মিটিংয়ে অনাপত্তি পেলে আপনাকে ব্যাংক এলসি বা টিটির মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে ছবি আনতে হবে।’ এখানেই শেষ নয়, অনন্য মামুনের মতে, একেকটি ছবি আমদানি কিংবা রফতানির জন্য বহু দফতরে ছুটে জুতার তলা ক্ষয় করতে হয়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড আপনাকে অনাপত্তি দিলে, সেই পেপারস নিয়ে কাস্টমস থেকে আপনাকে ছবি ছাড়াতে হবে। তারপর সেটা সেন্সর বোর্ডে জমা হবে এবং তারা দেখে সিদ্ধান্ত দেবে ছবিটি বাংলাদেশের প্রদর্শনের উপযোগী কি না। প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ে সচিব ও মন্ত্রীসহ মোট ৮টি দফতরের সাইন লাগে। আশা করি এবার ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন।’ এদিকে বাংলাদেশে ‘পাঠান’ মুক্তি ঘিরে মুম্বাই ইন্ডাস্ট্রিতে বিরাজ করছে খুশির আমেজ। কেননা তাদের জন্য নতুন একটি বাজারের দুয়ার খুলছে। এ নিয়ে দেদারছে উচ্ছ্বাস-আনন্দ প্রকাশ করছে ফিল্মফেয়ার থেকে শুরু করে দেশটির প্রথম সারির সকল গণমাধ্যম। আর ‘পাঠান’ প্রযোজক বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান যশরাজ ফিল্মসের উচ্ছ্বাস নিয়ে তো বলাই বাহুল্য। এর ঠিক বিপরীত চিত্র বাংলাদেশে। এখান থেকে পাঠানো ‘পাংকু জামাই’ নিয়ে সেখানে তো কোনও টু শব্দ নেই বটেই, এমনকি দেশেও এ নিয়ে কারও মাথাব্যাথা নেই। বলা প্রয়োজন, বহু বছর দেশে হিন্দি ছবি তথা সাফটাভুক্ত সাত দেশের ছবি আমদানি বন্ধ ছিল। তবে নির্মাতা ও পরিবেশক অনন্য মামুনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফের বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠন, তথ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়। এবং সবশেষে গত ১১ এপ্রিল সরকার ঘোষণা দেয় যে, আগামী দুই বছরে উপমহাদেশের ২০টি ছবি আমদানি করা যাবে। তবে মানতে হবে কয়েকটি শর্ত। এর মধ্যে একটি হলো- সিনেমা বিনিময় এবং আমদানিকৃত ছবি ঈদ ও দুর্গাপূজায় মুক্তি দেওয়া যাবে না। এসব শর্ত মেনেই ১২ মে মুক্তি পাচ্ছে ‘পাঠান’। যেটা গত ২৫ জানুয়ারি একযোগে বিশ্বের শতাধিক দেশে মুক্তি পেয়েছে। এবং বলিউড ইতিহাসের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে ১ হাজার ৫০ কোটি রুপি আয় করেছে। বিনোদন/আবির SHARES বিনোদন বিষয়: