অবশেষে জামিন পেলেন সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী ও সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মান্নান। বুধবার বিকেলে সুনামগঞ্জের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. হেমায়েত উদ্দিন তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এর আগে সকালে এমএ মান্নানের জামিন শুনানিতে দু’পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল দেখা দেয়ভ। হট্টগোলের একপর্যায়ে এজলাস ছাড়েন বিচারক। বেলা ১১ টায় সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. হেমায়েত উদ্দিন এজলাসে উঠার পরেই দু’পক্ষের হট্টগোল শুরু হয়। এমন ঘটনার পরে এজলাস ছাড়েন তিনি। পরে দুপুর আড়াইটায় শুনানির সময় নির্ধারণ করা হয়।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম এ মান্নানের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, 'মঙ্গলবার এম এ মান্নানের পক্ষে জামিন শুনানির এডমিশন করা হয়। এরপর আদালত আজকে শুনানির তারিখ ধার্য্য করেন। এভাবে এই আদালতে এর আগে বহুবার জামিন শুনানি হয়েছে। এ নিয়ে বাদীপক্ষ সকালে হট্টগোল শুরু করলে আদালত বিকালে শুনানি করেন এবং অসুস্থতা ও বয়স বিবেচনায় সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নানের জামিন মঞ্জুর করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মল্লিক মইনউদ্দিন সোহেল বলেন, কোনো আইনজীবীর সাবমিশন ছাড়া এডমিশনটা অস্বাভাবিক। এতে আদালতকে নিয়েও প্রশ্নের উদ্রেক হয়। আমরা মনে করছি এই অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জামিন শুনানি অস্বাভাবিকই হবে। এজন্য আমরা জামিন শুনানির আপত্তি জানিয়েছি।
বাদীপক্ষের আরেক আইনজীবী শেরেনুর আলী বলেন, 'আমরা বলেছি, এই মামলাটা এই আদালতে অস্বাভাবিকভাবে আনা হয়েছে। এই বিষয়ে আমরা বাদীপক্ষ জানি না। এনিয়ে আজকে শুনানি করতে চাই না। অন্যান্য মামলার মতো এই মামলার শুনানির তারিখ পরবর্তীতে দেয়ার জন্য আদালতকে বলেছি আমরা। কিন্তু আদালত আমাদের কথা শুনতে চান নি। আসামীপক্ষ শুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য তুরজোর করেছে। এটি নিয়ে হট্টগোল হয়েছে। পরে ‘আদালত’ এজলাস থেকে নেমে যান।'
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বর্তামানে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দি হিসাবে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে সিলেট কারাগার থেকে তাকে ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে কেবিনে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তাকে মেডিসিন বিভাগের অধিনে কেবিনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী জানিয়েছেন, 'সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীর বুকে ব্যাথা রয়েছে। এছাড়া তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই। তার চিকিৎসার জন্য ছয় সদস্যের একটি একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। '
সুনামগঞ্জ ৩ ( জগন্নাথপুর - শান্তিগঞ্জ) আসনের চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মান্নানকে গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ এলাকার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সুনামগঞ্জ সদর থানায় দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর পর থেকে তিনি সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে ছিলেন। গত শনিবার বিকেলে তাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। গত রবিবার সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের দ্বিতীয় দফা জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন সুনামগঞ্জের দ্রুত বিচার আদালত। এর আগে ২৩ সেপ্টেম্বর আরেকবার তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছিল।
সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে থাকা অবস্থায় শনিবার সকালে তিনি অসুস্থবোধ করলে তাকে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। পরে সিলেট কারা হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে ডিভিশনে রেখে তার চিকিৎসা চলছিল।
সাবেক যুগ্ম সচিব এম এ মান্নান ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেসময় জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে বিজয়ী হয়ে সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান এম এ মান্নান। পরে ২০১৮ সালে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।
সর্বশেষ এ বছরের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে জাতীয় সংসদের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হন এম এ মান্নান।
সিলেট/আবির
প্রধান সম্পাদকঃ আজিজুল হক চৌধুরী
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আনোয়ারুল হক রুবেল
বার্তা সম্পাদকঃ সুজন আহমদ