কক্সবাজার পৌরসভার নাজিরারটেক শুঁটকি পল্লীর জিরো পয়েন্টে সৈকত দখলের উৎসবে মেতেছে প্রভাবশালী মহল। এখানে দুই বছর আগেও পর্যটকের সমাগম, জেলেদের জাল বোনা, মাছ বাছাইসহ স্থানীয়রা খেলাধুলা করতেন। এখন দখলে নিয়ে দোকান বানিয়ে কেনাবেচা করছে প্রভাবশালীরা। এতে পর্যটক, জেলে ও স্থানীয়দের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীব বৈচিত্র্যের।
নাজিরারটেকের জিরো পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্রসৈকতে সারিবদ্ধভাবে তৈরি হচ্ছে দোকান ঘর।
স্থানীয়রা বলছেন, আগের সরকারের শেষের দিকে এবং বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের শুরু থেকে চলছে দখল বাণিজ্য। বিশেষ করে পট পরিবর্তনের পরপরই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দখলবাজরা। নতুন-পুরাতন মিলে প্রায় ৩০ একর খাস জায়গা দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। এই দখল বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরণের অঘটনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে দখলবাজির খবরে ঘটনাস্থলে যান সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী। তিনি গিয়ে অভিযান পরিচালনা করেন। এবং সর্তক করেন কেউ যেন খাস জায়গা বা সমুদ্রসৈকত দখল না করে।
স্থানীয়রা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সবাই ভেবেছিল অন্তবর্তী সরকারে আমলে দখলমুক্ত হবে এই সৈকত। কিন্তু না, বরং উল্টো বেড়েছে নতুনভাবে দখলবাজি। দখল ঠিকই চলছে শুধু পাল্টেছে ব্যক্তি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রে জানা যায়, প্রকাশ্যে দখল বাণিজ্য করছে ওই এলাকার বেশ কয়েকজন। এদের একজনের অধীনে প্রায় ৪০ টির বেশি দোকান রয়েছে। এছাড়া আরেক প্রভাবশালী দখলবাজ হলেন মহেশখালীর একজন (৩০)। তিনি মহেশখালী থেকে ভাড়াটে লোকজন এনে বালিয়াড়ি দখল করে দোকান ঘর তৈরি করেছেন।
জাহাঙ্গীর নামে স্থানীয় এক জেলে জানান, গত কয়েক বছর আগেও এ জায়গায় জাল বোনা হতো, ট্রলার থেকে মাছ উঠা-নামা হতো, পর্যটকদের আনাগোনা হতো। অথচ এখন জায়গাটি দখলবাজদের কবলে। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে একসময় পুরো সৈকতই হারিয়ে যাবে। পর্যটকরা আসবে না।
স্থানীয় লিয়াকত মিয়া জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অবৈধভাবে দখল করেছে তাদের দলের নেতাকর্মীরা। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর সবার প্রত্যাশা ছিল বালুচর দখলমুক্ত হবে। কিন্তু দখল প্রক্রিয়া দ্বিগুণ বেড়েছে।
তিনি বলেন, এই জায়গা সরকারের। এটি কারো পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। আমরা আশা করছি প্রকৃতির এই বালিয়াড়ি যেনো দখলমুক্ত হয়। এতে জেলেরা যেমন তাদের পুরাতন জায়গা ফিরে পাবে ঠিক তেমনি প্রকৃতি পাবে আপন রূপ।
নাজিরারটেক মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ বলেন, রাতের অন্ধকারে সৈকত দখল করে দোকানপাট তৈরী করছে প্রভাবশালীরা। এরই মধ্যে নতুন-পুরাতন মিলে প্রায় ৩০ একর খাস জায়গা দখল হয়ে গেছে। এসব জায়গা দখলবাজরা প্লট করে বিক্রি করছে। এতে প্রকৃতি ও এলাকাবাসী ক্ষতিগ্রস্ত। এই দখলকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব প্রশাসন যেন দখলমুক্ত করে এই ঐতিহ্যবাহী সৈকত।
সহকারী কমিশনায় (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, সৈকতের বালুচর দখল করে অবৈধ স্থাপনা দেখা গেলেও ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়নি। অবৈধ স্থাপনার কিছু অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এবং প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যেন কেউ দখল না করে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজ দায়িত্বে স্থাপনাগুলো সরিয়ে ফেলার নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। এই অপরাধ যেই করুক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। সমুদ্রসৈকত দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
প্রধান সম্পাদকঃ আজিজুল হক চৌধুরী
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আনোয়ারুল হক রুবেল
বার্তা সম্পাদকঃ সুজন আহমদ