ইতিহাসের বড় বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৩:৪৪ অপরাহ্ণ, জুন ১, ২০২৩

 

বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল; দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি; সামনে জাতীয় নির্বাচন; এসব বিবেচনায় নিয়েই আজ ঘোষণা করা হবে ইতিহাসের বড় বাজেট। আকার হতে পারে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ কোটি টাকা। তবুও ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যা পূরণ হবে দেশি-বিদেশি ঋণে। বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৭ শতাংশ। ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামাতে চায় সরকার।

এক নতুন পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতি। করোনার মহামারি পর ইউক্রেন যুদ্ধ বদলে দিয়েছে হিসেব-নিকেষ। বিশ্বজুড়েই অস্বাভাবিক বেড়েছে পণ্য ও সেবার দাম। বাংলাদেশও পড়েছে উচ্চমূল্যস্ফীতির কবলে।

একদিকে আমদানি কমিয়ে রিজার্ভ ধরে রাখার চেষ্টা; অন্যদিকে পণ্যের উৎপাদন ও জোগান বাড়িয়ে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি নির্বাচনী বছরে গতিশীল রাখতে হবে উন্নয়নের চাকাও।

এমন বাস্তবাতার মধ্যেই জাতীয় সংসদে উঠছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট।

আকার হতে পারে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটির বাজেটের চেয়ে যা প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা বেশি।

নতুন বাজেটে রাজম্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৫ শতাংশ। মোট অনুদান বাদে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে চায় সরকার। এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত ২০ হাজার কোটি ও কর-বহির্ভূত আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা।

বরাবরের মত এবারও ঘাটতি থাকছে বাজেটে। আকার ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। ৩ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা অনুদান সমন্বয় করলে ঘাটতি কমে দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।

ঘাটতি পূরণে এবারও দেশি-বিদেশী ঋণের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা, ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র বিক্রি ১৮ হাজার এবং অন্যান্য খাত থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।

ভর্তুকি কমানোর ঘোষণা থাকলেও নির্বাচনী বছরে এখাতে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয় করতে চায় সরকার।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে ১ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকা অর্থায়ন হবে সরকারি তহবিল থেকে। বাকিটা পূরণ হবে বিদেশি ঋণে। চলতি অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ রাখা ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।

এদিকে, আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার পরিচালন ব্যয় প্রাক্কলন করেছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা। আর মোট উন্নয়ন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, “পশ্চিমা জগতে মন্দাভাব আছে, সুতরাং তারা ১০০ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকার মাল কিনবে। আমার মাল কম বিক্রি হবে। আরেকটা মন্দাভাব ছিল বিদেশি কাজে, কৃষিতে আমরা একটানা ভালো আয় করে যাচ্ছি। তিনটি অ্যাঙ্গেলের মধ্যে দুটিতে সামান্য ছায়া পড়েছে, ওই ছায়াটা নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি। কিন্তু আমরা তো ছোট বাজেট বানাইনি।”

২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যষ্ফীতিকে ৬ শতাংশে আটকে রাখার পরিকল্পনা সরকারের।

করোনা মহামারির সংকটের পরে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি বেশ সংকটে। কিছুটা সংকটে বাংলাদেশের অর্থনীতিও। তবুও আসছে বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল রেকর্ড পরিমাণ সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকারও বেশি অর্থের বাজেট দিতে যাচ্ছেন। উদ্দেশ্য একটি সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার।

অর্থনৈতিক/আবির