ডকরেলকে পুল করে ৮৬ থেকে নব্বইয়ে যান নাজমুল হাসান শান্ত। এর আগে প্রায় প্রতি ওভারে বাউন্ডারি কিংবা ওভার বাউন্ডারি হাঁকানো শান্ত নিজেকে যেন কিছুটা গুটিয়ে নেন। স্ট্রাইক রোটেট করে খেলতে থাকেন। আবারো সেই ডকরেলকে পুল করে এবার দুই নিয়ে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে নাম লেখান শান্ত। নব্বই থেক সেঞ্চুরি পর্যন্ত শান্ত বড় শট খেলার চেষ্টা করেননি। দুরন্ত শান্তকে যেন কিছুটা আড়স্টও লেগেছে। প্রথম সেঞ্চুরি বলে কথা।
মাত্র ৮৩ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। শূন্যে ভেসে বুনো উল্লাস, বাতাসে চুমু এঁকে শতক উদযাপন করেন শান্ত। দিনটি যেন ছিল তারই। হবেই না-বা কেন। ৪৫ ওভারে তিনশর বেশি রান তাড়া করাতো চাট্টিখানি কথা নয়। শান্তর ম্যাজিকেল সেঞ্চুরি, তাওহিদ হৃদয়ের অনন্য ফিফটির ভিতে দাঁড়িয়ে মুশফিকের রহিমের নিখুঁত ফিনিশিংয়ে ৩ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে এই জয় নিশ্চিত করে লাল সবুজের দল। সিরিজে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে। সেঞ্চুরি হাঁকানো শান্ত হন ম্যাচসেরা।
ক্লাউড কাউন্টি গ্রাউন্ডে টস হেরে আয়ারল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠান অধিনায়ক তামিম ইকবাল। হ্যারি টেক্টরের সেঞ্চুরি আর ডকরেলের অপরাজিত ফিফটিতে ভর করে ৪৫ ওভারে ৬ উইকেটে ৩১৯ রান করে আয়ারল্যান্ড। তাড়া করতে নেমে শুরুতে তামিমকে (৭) হারায় বাংলাদেশ। থিতু হয়ে লিটন দাস (২১) লম্বা ইনিংস খেলতে পারেননি। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জুটি থেকে শান্তর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসা শুরু। ৪৭ বলে দুজনের ৬১ রানের জুটিতে শান্তরই অবদান ২০ বলে ৩৩!
সাকিব ২৭ রান করে ফিরলে তাওহিদ হ্দয়ের সঙ্গে জুটি গড়ে আইরিশদের বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা শুরু করেন। চোখ ধাঁধানো সব শটে গ্রাহাম হুমদের এলোমেলো করে ঝড়ের বেগে রান তুলতে থাকেন দুজনে। দুজনেই সমান ৪৯ বলে ফিফটির দেখা পান। শান্ত শেষ পর্যন্ত পেয়ে যান প্রথম শতকের দেখা। হৃদয় ফেরেন ৫৮ বলে ৬৮ রান করে। তার আউটে ভাঙে ১০২ বলে ১৩১ রানের জুটি।
নতুন ব্যাটসম্যান মুশফিকের সঙ্গে বেশিদূর যেতে পারেননি শান্ত। থামেন ৯৩ বলে ১১৭ রান করে। ১২টি চার ও ৩টি ছয়ে সাজানো ছিল তার ইনিংস। শান্ত ফিরলে ফিরলে মিরাজের সঙ্গে ২৯, তাইজুলের সঙ্গে ২৩ ও শরিফুলকে নিয়ে ১১ রানের জুটিতে জয় নিশ্চিত করেন মুশফিক। মিরাজ-তাইজুলের উইকেটে শেষ দিকে তৈরি হয় শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। যথাসম্ভব মুশফিক মাটি গড়ানো শট খেলে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ঝুঁকি নিতে চাননি। তবে ভাগ্যও কাজ করেছে। বেচেছেন রানআউট থেকে। শেষ ওভারে কঠিন পরিস্থিতিতে পেয়েছেন নো বল-ফ্রি হিট। সেই ফ্রি হিটে নিজের ট্রেডমাক শট স্কুপ করে বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে জয় নিশ্চিত করেন। ২৮ বলে ৩৬ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। সঙ্গে শরিফুল অপরাজিত ছিলেন ৪ রানে। আইরিশদের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নেন কার্টিস ক্যাম্পার-ডকরেল
অথচ ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে ছিল শঙ্কায়। শুরু হয় প্রায় সোয়া দুই ঘন্টা পর। ৫ ওভার করে কমানো হয়। পিচের সুবিধা কাজে লাগিয়ে হাসান মাহমুদ এনে দেন দারুণ শুরু। ১৬ রানে সাজঘরে পাঠান দুই আইরিশ ব্যাটসম্যানকে। এরপর থেকে অবশ্য পালটা আক্রমণে বাংলাদেশের বোলিংকে এলোমেলো করে দেন টেক্টররা। বালবার্নিকে সঙ্গে নিয়ে ৯৮ রানের জুটি গড়ে প্রথমে ধাক্কা সামাল দেন টেক্টর। বালবার্নি ৪২ রান করেন। মাঝে ফেরেন টকার (১৬) ও ক্যাস্পার (৮)। এবার টেক্টরের সঙ্গী ডকরেল। দুজনে যেন তাণ্ডব চালান। ৬৮ বলে যোগ করেন ১১৫ রান। টেক্টর ৯৩ বলে শতক হাঁকান। শেষ পর্যন্ত থামেন ১১৩ বলে ১৪০ রান করে। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ১০টি ছয় ৭টি চারের মারে।
টেক্টর ফিরলেও ডকরেল ছিলেন অপরাজিত। ৩১ বলে ফিফটি হাঁকানো এই ব্যাটসম্যান থামেন ৪৭ বলে ৭৪ রান করে। সঙ্গে ৮ বলে ২০ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন মার্ক অ্যাডেয়ার। বাংলাদেশ যেমন এলোমেলো বোলিং করেছে তেমনি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হাত ফসকেছে ক্যাচও। টেক্টর ২৩ রানে জীবন পান শরিফুলের হাতে, সেখানে থেকে থামেন ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে! তৃতীয় শতক হাঁকানো টেক্টরের এর আগে সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ১১৩। আর ডকরেলকে ৫৯ রানে জীবন দেন সাকিব! দুজনের এই সুযোগ যদি কাজে লাগাতে পারতো জল অবশ্য এতদূর গড়াতো না।
৯ ওভারে ২ উইকেট নেওয়া শরিফুল একাই দেন ৮৩ রান! একমাত্র হাসান ছাড়া সব বোলারই ওভার প্রতি ছয়ের বেশি রান দেন। হাসান ৯ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। প্রথম ৫ ওভারে ১২ রান দিয়েছিলেন, শেষ চার ওভারে দেন ৩৬। ইবাদত শুরু থেকে ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেও শেষ দিকে এলোমেলো বোলিং করেন। ৯ ওভারে তিনি খরচ করেন ৫৬ রান। উইকেট নেন ১টি।
এ ছাড়া তাইজুল ৭ ওভারে ৫৯, সাকিব ৯ ওভারে দেন ৫৭ রান। মিরাজ মাত্র ২ ওভারে দেন ১৩। তাইজুল ১টি উইকেট পেলেও বাকি দুজন খালি হাতে ফেরেন।
খেলা/আবির
প্রধান সম্পাদকঃ আজিজুল হক চৌধুরী
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ আনোয়ারুল হক রুবেল
বার্তা সম্পাদকঃ সুজন আহমদ