রাঙামাটি বেতার প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ

প্রকাশিত: ৩:৪৪ অপরাহ্ণ, মে ১৬, ২০২৩

 

বাংলাদেশ বেতার রাঙামাটি আঞ্চলিক কেন্দ্রের প্রকৌশলী মো. আবু ছায়েদের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে দীর্ঘদিন ধরে যৌন নিপীড়নসহ ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন তার অধীনস্থ এক সহকর্মী নারী। ভুক্তভোগী নারী একই বেতার কেন্দ্রে অনিয়মিত বেতনভুক্ত সংগীত প্রযোজক হিসাবে কর্মরত আছেন।

জানা যায়, বাংলাদেশ বেতার মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া ভুক্তভোগী নারীর এক লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বেতার কেন্দ্রীয় সদরদপ্তরের পরিচালক (অনুষ্ঠান) এসএম আবুল হোসনেক আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ বেতার। তিনি ১৩ মে সরাসরি রাঙামাটি উপস্থিত হয়ে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত করে গেছেন।

এ সময় কমিটির অন্য সদস্য বেতার রাঙামাটি আঞ্চলিক কেন্দ্রের উপপরিচালক শরিফুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তার আগে কমিটির অপর সদস্য বেতার চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কেন্দ্রের জৈষ্ঠ প্রকৌশলী রমেশ দেওয়ান অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে গেছেন। তদন্ত চলাকালে প্রকাশ্য শুনানিও হয়েছে।

এ সময় ভুক্তভোগী নারী ও অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্যসহ সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ করা না হলেও ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী নারী তার লিখিত অভিযোগে বেতার প্রকৌশলী আবু ছায়েদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগও করেছেন। বিয়ের প্রলোভনে তাকে দীর্ঘদিন ধরে দফায় দফায় ধর্ষণ করেন ছায়েদ। কিন্তু এখন বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান।

অভিযোগে ভুক্তভোগী নারী বলেন, প্রকৌশলী মো. আবু ছায়েদ তাকে রাঙামাটি আঞ্চলিক বেতার কেন্দ্রে সংগীত প্রযোজক হিসাবে অনিয়মিত চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা নেন। এর কিছুদিন পর থেকেই তাকে যৌন নিপীড়ন শুরু করেন প্রকৌশলী আবু ছায়েদ। এসব সহ্য করতে না পেরে গত বছর ৮ আগস্ট আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ভুক্তভোগী নারী। তখন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসার পর ঘটনার জন্য তার কাছে ক্ষমা চান প্রকৌশলী আবু ছায়েদ। কিন্তু আবার কিছুদিন যেতে না যেতেই চরিত্রের পুনরাবৃত্তি শুরু করে চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন ছায়েদ।

এর সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল ভুক্তভোগী নারীর বাসায় গিয়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এ ঘটনার পর আবার ছায়েদকে বিয়ের চাপ দেন ভুক্তভোগী নারী। এতে ‘সব আশা পূর্ণ হবে’ মর্মে ঘটনা ধামাচাপা দিতে মিথ্যা আশ্বাস দেন বেতার প্রকৌশলী ছায়েদ। পরে ৪ মে ছায়েদ তাকে (ভুক্তভোগী নারী) জানান যে, তার জন্য সব করতে পারবে- কিন্তু বিয়ে করা সম্ভব নয়। এ জবাবে কান্নার চিৎকারে আত্মহত্যার কথা লম্পট ছায়েদের ইশারায় প্রকৌশল শাখার রাকিব, হারুন ও রিপন আলী তাকে (ভুক্তভোগী নারী) মারধর করে এবং একটি মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে জোর করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। ১৩ মে বেতার রাঙামাটি কেন্দ্রে শুনানিতে তদন্ত কিমিটকে অভিযোগের বিস্তারিত উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী নারী।

এ সময় অভিযুক্ত ও জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে তাদের নিয়েছে তদন্ত কমিটি।

ভুক্তভোগী নারী বলেন, এখন ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় আছি। তদন্তকমিটি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত যাচাই করে গেছে। আশা করছি সঠিক ও সত্য প্রতিবেদন সদর দপ্তরে উপস্থাপন করবে তদন্ত কমিটি। ছায়েদ স্যার আমার ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সত্য ঘটনাটিকে অন্যদিকে নিয়ে যেতে তার নিজস্ব লোকজন লেলিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবু আমার আশা, আমি ন্যায় বিচার পাব।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বেতারের রাঙামাটি আঞ্চলিক কেন্দ্রের প্রকৌশলী মো. আবু ছায়েদ বলেন, ঘটে যাওয়া বিষয়টি নিয়ে বেতার উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বেতার বিভাগ ও বাংলাদেশ বেতার সদর দপ্তর তদন্ত করে গেছেন। সত্য-মিথ্যা কর্তৃপক্ষের লোকজন বুঝবেন। তবে এটা মিথ্যা ঘটনা। মেয়েটি বিভিন্ন জনের টোপে পড়ে এমন কাজ করছে।

সারাদেশ/আবির