মঙ্গলবার থেকে লালন স্মরণোৎসব শুরু, খুশি ভক্তরা

প্রকাশিত: ৬:৩৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০২২

 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত দুই বছর লালন স্মরণোৎসব স্থগিত ছিল। তবে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসব।

এ উপলক্ষে কয়েকদিন আগে থেকে আখড়াবাড়িতে হাজার-হাজার ভক্ত-অনুসারীরা দূরদূরান্ত থেকে আসতে শুরু করেছেন। কালীগঙ্গা নদীর পাড় ঘেঁষে লালন মাঠে প্রায় শতাধিক অস্থায়ী বসা-থাকার জায়গা ও প্রায় অর্ধশতাধিক দোকান বসেছে।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমির আয়াজনে লালন স্মরণোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশি ও বিদেশি লাখো বাউল ভক্তের আগমন হবে আখড়াবাড়িতে। এবারের লালন মেলার প্রতিপাদ্য বিষয় ফকির লালন শাহের অমর বাণী ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’।

মরমি সাধক ফকির লালন শাহ জীবদ্দশায় দোল পূর্ণিমার রাতে শিষ্যদের নিয়ে সাধুসঙ্গে বসতেন। তারই ধারাবাহিকতায় সাঁইজির তিরোধানের এত বছর পরও কালীগঙ্গার ধারে প্রতি বছর দিবসটি ঘিরে পালিত হয়ে আসছে এ উৎসব।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লালন স্মরণোৎসব উপলক্ষে হাজার-হাজার ভক্ত-অনুসারীরা দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন ছেঁউড়িয়ায় আখড়াবাড়িতে। কেউ কেউ দলবদ্ধ হয়ে গান গাইছেন, কেউ রান্না করছেন। মাজার প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করে বর্ণিল পরিবেশের সৃষ্টি করেছে একাডেমি কর্তৃপক্ষ। তারা যশোর, ঢাকা, চাঁদপুর, ঝিনাইদহ, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছেন।

তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন, আলোচনা সভা শেষে মঞ্চে শুরু হবে লালন সঙ্গীত। যা গাইবেন লালন একাডেমির শিল্পীরা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বাউল শিল্পী ও ভক্তরা। মাজার প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করে বর্ণিল পরিবেশের সৃষ্টি করছে একাডেমি কর্তৃপক্ষ। ভক্ত-অনুসারীরা আগে থেকেই লালন আখড়ায় জায়গা করে নিতে শুরু করেছেন।

মোহাম্মদ আরিফ নামে এক ব্যক্তি বলেন, এক সপ্তাহ আগে আমি এখানে এসেছি। আমি একজন লালন ভক্ত। আমার মতো শত শত ভক্ত-অনুসারীরা এখানে এসেছেন। প্রতিদিনই লোকজন আসছে বিভিন্ন জেলা থেকে। খুবই ভালো লাগছে।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে আসা খন্দকার জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা ঝিনাইদহ থেকে গত কয়েকদিন আগে ছেঁউড়িয়ায় এসেছি। আমরা নিজেরা এখানে রান্নার ব্যবস্থা করেছি।

লালন একাডেমির সঙ্গীত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উস্তাদ আক্কাস আলী বলেন, দোল পূর্ণিমা উৎসব দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় সাধু-গুরুরা হতাশায় ভুগছিলেন। এবার লালন স্মরণোৎসব হবে। এজন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করা হবে।

লালন একাডেমির অ্যাডহক কমিটির সদস্য তাইজাল আলী খান বলেন, মরমি এ সঙ্গীত সাধকের বার্ষিক স্মরণোৎসব উপলক্ষে তার সাধন-ভজনের তীর্থস্থান ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণ পরিণত হয় উৎসবের আমেজে। দেশ-বিদেশ থেকে লালনভক্ত, বাউল অনুসারী ও সুধীজনসহ অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটে এখানে। এবারো তার ব্যতিক্রম হবে না। করোনার জন্য পর পর দুই বছর অনুষ্ঠান বন্ধ ছিল। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার বেশি মানুষের আগমন ঘটতে পারে।

লালন একাডেমির সদস্য সচিব ও সহকারী কমিশনার সবুজ হাসান বলেন, লালন স্মরণোৎসবকে কেন্দ্র করে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এ উপলক্ষে মাজার প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুরো মাজার এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। জেলা পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। সেইসঙ্গে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সেখানে দায়িত্বে থাকবেন।

সারাদেশ/আবির