বৈধ পথে ইতালি যেতে পথ খুলছে বাংলাদেশিদের

প্রকাশিত: ৭:৩৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৫, ২০২৩

 

বাংলাদেশসহ মোট ৩৩টি দেশ থেকে চলতি বছরের ২৭ মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮২ হাজার ৭০৫ জন নতুন শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা করেছে ইতালি। এ বিষয়ে সরকারি গেজেটও প্রকাশ করেছে দেশটি। ফলে ইতালি যাওয়ার পরিকল্পনা যাদের দীর্ঘদিন ধরে ছিল তারা খুব সহজেই ঝামেলাহীনভাবে কর্মসংস্থানের জন্য যেতে পারবেন দেশটিতে।

আবেদন করার পর আপত্তি ছাড়াই সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ৩০ দিনের মধ্যে শ্রমিকের মূল দেশে পাঠানো হবে, যেখানে স্থানীয় ইতালীয় দূতাবাস বা কনস্যুলেট ২০ দিনের মধ্যে ভিসা জারি করবে।

নতুন এই ঘোষনা অনুযায়ী মৌসুমী কর্মী, অ-মৌসুমী কর্মী এবং স্ব-নিযুক্ত কর্মীদের তিনটি বিভাগের অধীনে চাকরি দেওয়া হবে। উপযুক্ত প্রার্থীরা ট্রাক ড্রাইভার, ইলেকট্রিশিয়ান এবং মেশিন অপারেটর, সেইসাথে নির্মাণ, হোটেল, খাদ্য, নৌ, পর্যটন এবং কৃষি খাতের চাকরির জন্য আবেদন করতে পারেন।

কারা আবেদন করতে পারবেন এবং কোন কোন খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়া যাবে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউরো নিউজ।

যারা পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন

প্রতি বছর, ইতালি ‘ডিক্রেটো ফ্লুসি’ প্রকাশ করে, একটি সরকারী ডিক্রি যা তার বার্ষিক ওয়ার্ক পারমিট কোটা এবং সতর্কতা নির্ধারণ করে। চলতি বছর ইস্যু করা ৮২ হাজার ৭০৫টি ওয়ার্ক পারমিটের মধ্যে মৌসুমী কাজের জন্য ৪৪ হাজার শ্রমিক নেবে দেশটি। এর মধ্যে শুধু কৃষিকাজের জন্য নেওয়া হবে ২২ হাজার জন। যারা কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজ করতে আগ্রহী, তারা এই কোটায় আবেদন করতে পারবেন। বাকিরা অন্যান্য সিজনাল কাজের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

অবশিষ্ট পারমিট নন-সিজনাল বা স্ব-নিযুক্ত কাজের জন্য দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে; সড়ক পরিবহণ খাত, কন্সট্রাকশন, হোটেল এবং পর্যটন। চলতি বছরের জন্য নতুন যে খাত রয়েছে সেগুলো হলো; মেকানিক্স, টেলিযোগাযোগ, খাদ্য, জাহাজ নির্মাণ ইত্যাদি। এসব খাতে কাজ করতে হলে সমস্ত বিদেশী কর্মীদের অবশ্যই ওয়ার্ক ভিসা এবং রেসিডেন্স পারমিট পেতে হবে।

সেল্ফ এম্প্লয়েডরা কি ওয়ার্ক পারমিট পাবে?

পূর্ববর্তী বছরগুলির মতো এ বছরও ইতালিতে সেল্ফ এম্প্লয়েড কর্মীদের জন্য মাত্র ৫০০টি পারমিট জারি করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রিল্যান্সার, উদ্যোক্তা এবং শিল্পী।

তবে এ বছর সুযোগ বেশি দেওয়ার পাশাপাশি নিয়মও কঠোর করেছে দেশটি। চলতি বছর নিয়োগকর্তাদের অবশ্যই স্থানীয় চাকরি কেন্দ্রের সঙ্গে যাচাই করতে হবে যে নন-ইইএ কর্মীদের জন্য পারমিটের জন্য আবেদন করার আগে নন সিজনাল কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য কোনও যোগ্য ইতালীয় নাগরিক পাওয়া যাচ্ছে না। ইতালিতে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা এর থেকে বাদ পড়েছেন।

সিজনাল শ্রমিকরা সাধারণত ৯ মাসের জন্য ভিসা পায়। ভিসার মেয়াদ শেষে তাদের ফিরতে হয় নিজ দেশে। কেউ যদি না ফিরে তবে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে কঠিন জীবনের মুখোমুখি হতে হয়।

সিজনাল ভিসায় ইতালি যাওয়ার পর অধিকাংশ শ্রমিক সঠিক সময়ে ফিরে না যাওয়ার অপরাধে ইতালি সরকার বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রায় ৯ বছর নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। এই নিষেধাজ্ঞা গত বছর থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে।

তবে সিজনাল ভিসায় ইতালিতে কাজ করে নির্দিষ্ট সময়ে নিজ দেশে ফিরে গেলে পরে আবার কাজের ক্ষেত্রে তাদেরকে অগ্রাধীকার দেওয়া হয়। এমনকি তারা কোনো এক সময় গিয়ে দেশটিতে স্থায়ী বসবাসের সুযোগও পেয়ে থাকে। চলতি বছর এ জাতীয় ৬ হাজার ৬০০ জন দেশটিতে স্থায়ী হওয়ার আবেদন করতে পারবে।

গ্রীষ্ম মৌসুমে ইতালিতে কৃষিকাজের জন্য প্রচুর শ্রমিক দরকার হয়। এ ছাড়া, পর্যটন এলাকায় হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য অনেক খাতে শ্রমিক প্রয়োজন হয়। সিজনাল ভিসার শ্রমিকরা সাধারণত এসব খাতে কাজ করেন। একটু বেশি পরিশ্রম করলে এখান থেকে প্রতি মাসে গড়ে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

নন-সিজনাল কোটায় সুযোগ পাবে ৩৮ হাজার ৭০৫ জন শ্রমিক।

আবেদন খরচ

শ্রমিক প্রতি আবেদন খরচ পড়বে ১৬ ইউরো। এর বাইরে কেউ যদি আবেদন ফরম পূরণ করতে হেল্প ডেস্কের সাহায্য নেন, এর জন্য আরও ১০০ থেকে ১৫০ ইউরো খরচ হতে পারে। তবে কোন দেশে থেকে কতজন শ্রমিক নেওয়া হবে এ ধরনের কোনো কোটা কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেনি।

প্রবাস জীবন/আবির