বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রাম ত্যাগ আর সংগ্রামের

প্রকাশিত: ৪:৫০ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৬, ২০২২

মইনুল হাসান আবির:
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ বাঙালির মুক্তির সংগ্রাম। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানে ভাষা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি স্বাধীনতার চেতনা দৃড় হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচন ও যুক্তফ্রন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যুক্তফ্রন্টের মোট ২১ দফা দাবি নিয়ে। বাঙালি জাতি, বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি এবং বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে মুসলিম লীগের নেতৃত্বের কার্যকলাপ ও পাকিস্তানি শাসকদের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপের ফলে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করেও ক্ষমতায় ঠিকে থাকতে পারে নি। তথাপি পাকিস্তানের পরবর্তী রাজনৈতিক ইতিহাসে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করে।

১৯৫৮ সালে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানে সামরিক শাসনাধীনে আসে। এর সাথে দেশটির প্রথম এক দশকের রাজনৈতিক শাসনের অবসান ঘটেছিলো। তখন পাকিস্তানের রাজনৈতিতে সূচনা ঘটেছিল নতুন অধ্যায়ের। ১৯৫৮-১৯৭১ সালের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অতিক্রান্ত হয়। জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসন ও স্বৈরাচারী দিয়ে তখন আন্দোলন শুরু হয়েছিলো। ছাত্র আন্দোলন, ভাষা ও সংস্কৃতি সংগ্রাম, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, পাক ভারত যুদ্ধ, এবং ছয় দফা আন্দোলন ক্রমান্বয়ে বাঙালির মুক্তির সংগ্রামকে একটি নির্দিষ্ট আকার ধারন করেছিলো। ফলে ছেষট্টির পরে অত্যন্ত দ্রুত তালে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, আইয়ুবের পতন, ইয়াহিয়া খানের শাসন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ধাপে ধাপে বাংলাদেশকে স্বাধীনতার সিংহ দ্বারে পৌছে দিয়েছিলো যা আজকে স্বাধীন বাংলাদেশ নামে পরিচিত।

পশ্চিম পাকিস্তান-কেন্দ্রিক সামরিক জান্তা সরকার ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মার্চ রাতে কঠোর হস্তে দমনের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে এবং নিয়মতান্ত্রিক গণহত্যা শুরু করে। জেনারেল টিক্কা খান ও তার বাহিনী পরিচালিত এই গণহত্যাযজ্ঞে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে অন্তত ৭০০০ নিরীহ বাঙালি নিহত হয়েছিলো।

১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ বিকাল ২ টা ১০ মিনিটে চট্টিগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আবদুল হান্নান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

পরে ২৭ শে মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যে ঘোষণাটি প্রচার করেন তা ভারতের ‘দি স্টেটম্যান’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। দীর্ঘ নয় মাস স্বাধীনতা যুদ্ধের পর লাখো লাখো শহীদের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা।

স্বাধীনতা দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা, অনেক রক্ত আর ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই স্বাধীনতা। কাজেই এ দায়িত্ব পালনে সেনাবাহিনীর সজাগ ও সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। যাতে এই স্বাধীনতা নিয়ে যেন কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে।

স্বাধীনতা দিবসকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিখ্যাত উক্তি, ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা,আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন।আমি বাংলাদেশের জনগনকে আহবান জানাইতেছি যে,যে যেখানে আছো,যাহার যা কিছু আছে,তাই নিয়ে রুখে দাড়াও,সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো।পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।

লেখক: মইনুল হাসান আবির
রাষ্ট্রবিজ্ঞান শিক্ষার্থী, এম সি কলেজ, সিলেট।