বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সহস্র বছরের সেরা বাঙালি The Daily Sylhet The Daily Sylhet প্রকাশিত: ৩:৩৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০২২ “Winston Churchill, Britain’s great wartime leader and Prime Minister, once said of his own role in winning the War : “It was the nation that had the lion heart. I had the luck to be called upon to give the roar”. The story of the birth of Bangladesh is the story of the struggle of the Bengali people for national independence. But Sheikh Mujibur Rahman, like Winston Churchill in Britain, was the indispensable and lion-hearted leader who led the Bengali people from colonial repression to independent nationhood and who, uniquely, articulated the goals and fortified the resolve of the Bengali people. His indeed was the “roar”. —Peter Shore british M.P. আমাদের বাঙালি জাতি-রাষ্ট্রের স্রষ্টা, ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। আমার সৌভাগ্য আমি তাকে দেখেছি। তার সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পেয়েছি, কথা বলেছি, সমালোচনামূলক প্রশ্ন করেছি, উত্তর শুনেছি। বাঙালিদের মধ্যে সাধারণত দেখা যায় না এমন শালপ্রাংশু দেহকান্তি, অনিন্দ্যসুন্দর মুখায়ব, ব্যক্তিত্বের প্রবলতা। তার জলদগম্ভীর কণ্ঠস্বর যে কোনো মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট ও মোহাবিষ্ট করে ফেলত। আর যদি তার বাগ্মিতার কথা বলি! সে-এক বিস্ময়কর মাদকতায় ভরা বিস্ফোরক শব্দাবলির শিল্পীত অনুরণন (Resonance) ওজস্বিতা, আবেগ, যুক্তি আর তার বলবার ধরন, শব্দ প্রক্ষেপণের হূদয়গ্রহীতায় আকর্ষণীয় তার বক্তৃতা হয়ে উঠত জনচিত্তহারী এক নিপুণ শিল্প। ১৯৭১-এ বিশ্ববিখ্যাত নিউজউইক সাপ্তাহিক সাময়িকী তাকে যে ‘রাজনীতির কবি’ (Poet of Politics) আখ্যাত করেছিল তা তার বক্তৃতার ঐসব সৌন্দর্যভরা মোহনীয় শিল্পগুণের জন্যই। বঙ্গবন্ধুকে বলা হয় ক্যারিশম্যাটিক লিডার (Charismatic Leader), অর্থাত্ তার চরিত্রে ক্যারিশমা-গুণ যুক্ত হয়েছে। ক্যারিশমা কী? ‘ক্যারিশমা’ হল ‘সম্মোহনী’ শক্তি। যে-নেতার শক্তিশালী, আকর্ষণীয় ও অনন্য ব্যক্তিগত গুণাবলি অন্যকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে, তিনিই ক্যারিশম্যাটিক লিডার। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক জীবনে এই গুণাবলি অর্জন করেই হয়ে উঠেছিলেন দুঃখ-দৈন্যপীড়িত, দুর্দশাগ্রস্ত ও উপেক্ষিত-বঞ্চিত বাঙালির পরাত্পর জাতীয়তাবাদী নেতা এবং বাঙালির শতসহস্র বছরের স্বাধীন রাষ্ট্রকামনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের মহান রূপকার। তাই তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি ও স্রষ্টা এবং রাষ্ট্রনৈতিক অর্থে রাষ্ট্রপিতা (Founding Father of Bangladesh State)। আর এই অনন্য কীর্তির জন্যই তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। বিশ্ববিখ্যাত সাংবাদিক Cyril Dunn বলেন : “In the thousand year history of Bengal, Sheikh Mujib is her only leader who has, in terms of blood, race language, culture and birth, been a full blooded Bengali. His physical stature was immense. His voice was redolent of thounder. His charisma worked magic on people. The courageand charm that flowed from him made him an unique superman in these times.” ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য Lord Fenner বলেছেন, “In a sense, Sheikh Mujib is a greater leader than George Washington, Mahatma Gandhi and De Valera.” দুই শেখ মুজিব কেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক (Statesman)? কেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি? কেন তিনি বাঙালি জাতির পিতা? এসব প্রশ্নে কারো কারো মনে সংশয় থাকতে পারে, থাকতে পারে ভিন্নমত; কিন্তু ইতিহাস ও রাষ্ট্র-দর্শনের তাত্ত্বিক বিচারে এর যথাযথ উত্তর পাওয়া কঠিন নয়। কোনো ভৌগোলিক অঞ্চলের মানুষ শত সহস্র বছরে নানা উপাদান, যথা জীবনযাপনের ধরন, খাদ্যাভাস, রীতিনীতি, চিন্তাচেতনার ধরন, ধর্মানুভূতি, বিশাস, সংস্কার এবং মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রবণতা এবং শিল্প-সাহিত্য-দর্শন তথা সংস্কৃতির নানা ক্ষেত্রের প্রতিভাবানের মৌলিক অবদানে ধীরে ধীরে একটি জাতি হিসাবে বিকশিত হয়ে ওঠে; এবং কোনো একটা যুগে সেই জাতি তার সামাজিক-সাংস্কৃতিকমনস্তাত্ত্বিক ও রাষ্ট্রসত্তাগত চেতনার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে। দেশের সর্বস্তরের ব্যাপক বিপুল মানুষের মনে এই সর্বোচ্চ চেতনার স্তর সৃষ্টিতে যে নেতার প্রধান ভূমিকা থাকে এবং সে ভূমিকা সর্বজনস্বীকৃত হয়ে যখন তা একটা যুগ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় তখনই কোনো জাতি বা জনগোষ্ঠীর মাহেন্দ্রক্ষণ। বাঙালি জাতির জীবনে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ সর্বোচ্চ চূড়া স্পর্শ করে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ। আর তারই জীবনব্যাপী একনিষ্ঠ সাধনায় সৃষ্ট সেই চূড়ার ওপর দাঁড়িয়ে বাঙালি জাতির অবিসংবাদী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা করেন: ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বাঙালি হাজার বছর ধরে এই ঘোষণার অপেক্ষায় ছিল। এজন্যই শেখ মুজিব হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। কারণ, তিনি বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্নের এবং অন্তরের অন্তঃস্থলে গুমরে মরা স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন সেদিন। যুগের দাবিকে সাহসে, শৌর্যে ও দার্ঢ্যে ভাষা দিয়েছিলেন তিনি দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর কামান, বন্দুক ও হেলিকপ্টার গানশিপের যে কোনো মুহূর্তে গর্জে ওঠার ভয়াল পরিস্থিতির মুখে। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো নেতা এমন ভয়ংকর জটিল পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে এত অকুতোভয়ে স্বাধীনতার কথা উচ্চারণের সাহস করেননি। এই নজিরবিহীন ঘটনার জন্যই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা, নিজস্ব রাষ্ট্রসত্তাগত বাঙালি জাতির জনক এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্রষ্টা। তার চেয়ে প্রতিভাবান ও বহুগুণে গুণান্বিত বাঙালি অনেকেই ছিলেন; তবু যে তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও আধুনিক রাষ্ট্রসত্তার অধিকারী বাঙালি জাতির জনক, তার কারণ : এক. তিনি হাজার বছরের বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে জীবনব্যাপী একনিষ্ঠ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, কারা-যন্ত্রণা ভোগ করেই বাস্তবরূপ দিয়ে গেছেন। শিল্প বলুন, সাহিত্য বলুন, বিজ্ঞান বলুন বা রাজনীতি প্রযুক্তি যাই বলুন কোনো কিছুই স্বাধীনতার চেয়ে বড়ো নয়। অতএব, ঐসব বিষয়ে সিদ্ধিলাভ, আর এক অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ প্রতীম পশ্চাতভূমির (Hinterland) অসংগঠিত জনগোষ্ঠীকে সুস্পষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্যে সময়োপযোগী মোক্ষম কর্মসূচির মাধ্যমে ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে মরণপণ সমুদয় ঐক্যে গাঁথা স্বাধীনতাকামী জাতিকে উন্নীত করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আধুনিক মারণাস্ত্র সমৃদ্ধ দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর কজা থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনে দেওয়া তুল্যমূল্য বিবেচিত হতে পারে না; দুই. বঙ্গবন্ধুর অতুলনীয় কৃতিত্বে এখানে যে তিনি বাংলাদেশে চারটি ধর্মে বিভক্ত অসম ও অসমন্বিত উপাদানে গঠিত বাঙালি জাতির এবং প্রায় ৪৯টি ক্ষুদ্র। জাতিসত্তাকে একই জাতিরাষ্ট্র গঠনের আন্দোলনে অটুট ঐক্যে সংহত করে দক্ষিণ এশিয়ায় এক অনন্য ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক ও সমাজতন্ত্রাভিসারী রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হন। এ রকম সাফল্য নজিরবিহীন; তিন. ইতিহাসে আর কোনো বাঙালি তো এমন করে বলেননি : ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময়েও বলবো আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা।’ চার. উনিশ শতকের তথাকথিত বঙ্গীয় নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল ইয়ং বেঙ্গল। মুভমন্টের মাধ্যমে, কিন্তু ডিরোজিও শিষ্যদের অতিরেক দেখে আশঙ্কিত রাজনারায়ণ বসু এই ভয়ঙ্কর অমঙ্গল নিবারণ করিবার জন্য শেষ পর্যন্ত দল গঠন করেন সাম্প্রদায়িক সামাঙ্কিত হিন্দুমেলা (১৮৬৭)। দুর্ভাগ্যবশত ঠাকুর পরিবারও এর সঙ্গে যুক্ত হয়। তাই এ প্রয়াস জাতীয় ঐক্য বা অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিসত্তা গঠনে কোনো অবদান রাখতে ব্যর্থ হয়। পাঁচ. ২০০৪ বিবিসি বাংলার জনমত জরিপে হাজার বছরে শ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দ্বিতীয় স্থানে আসেন রবীন্দ্রনাথ এবং তৃতীয় নজরুল। ইতিহাস সৃষ্টি করে জনসাধারণ। তাই তাদের সিদ্ধান্তে ভুল হয় না। ছয়. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্রষ্টা এবং নবরাজনৈতিক বাঙালি জাতির পিতা তার তাত্ত্বিক ভিত্তির জন্য আমরা এ বিষয়ের শ্রেষ্ঠ ভাবুক জার্মান দার্শনিক হেগেলের শরণ নিতে পারি। হেগেল বলেন : “Man owes his entire existence to the state and has his being within it alone.” তিনি আরো বলেন : “The great man of the age is one who can put into words the will of his age, tell his age, what its will is, and accomplish it. What he does is the heart and essence of his age, he actualies his age” (Philosopy of Right গ্রন্থ)। শেখ মুজিব তার যুগের ইচ্ছা ও এষণাকে (Will of his age) বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন (actualize his age)। তাই তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি ও বাঙালি জাতির জনক। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে কয়েক শ বছরে যে বাঙালি জাতি গড়ে ওঠে তা ছিল প্রথমে একটি নৃগোষ্ঠী (Race) মাত্র। একই ভাষা ও সাধারণ আর্থসামাজিক জীবনধারার বিকাশের ফলে এবং শারীরিক, মানসিক, মনস্তাত্ত্বিক গড়নের সাযুজ্যে এই নৃগোষ্ঠী স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও বহু ক্ষেত্রের নানা মনীষীর স্ব স্ব ক্ষেত্রে চিন্তার নব নব বিন্যাসে, একটি উন্নত জনগোষ্ঠীতে (Community) পরিণত হয়। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে প্রায় আড়াই দশকের সুপরিকল্পিত স্বাধিকার ও কৌশলগত স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর তা একটি রাষ্ট্রনৈতিক জাতিতে পরিণত হয়েছে। এর জন্যে বাঙালি কৃষক, ছাত্র, তরুণ মুক্তিযোদ্ধা আত্মাহুতি দিয়েছে, সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্যের অনুশীলনের মাধ্যমে গড়ে তুলেছে বাঙালি জাতিসত্তা এবং ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এক ঐক্যবদ্ধ জাতি। এই জাতিরই মূল স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই জাতি গঠনে নানা কাল-পর্বে অবদান রাখেন চর্যাপদের সিদ্ধসাধক, নাথ-যোগী, তান্ত্রিক, শ্রী চৈতন্যদেব, মধ্যযুগের কবি-সাহিত্যিক ভাবুক-চিন্তক, বাউল-বৈষ্ণব; কবিয়াল-বয়াতি ও লাকেজ সংস্কৃতির গুণীজন; এবং আধুনিককালের স্যার সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজি বসু, এ কে ফজলুল হক, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র। রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, জীবনানন্দ, মওলানা ভাসানী, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ব্যারিস্টার আবদুর রসুলসহ অনেকে। কিন্তু এদের অবদান রাষ্ট্র গঠনের পূর্ণতা পায়নি। তবে একাগ্র লক্ষাভিসারী প্রয়াসে ইতিহাসের গতিধারায় রাজনৈতিক উত্তুঙ্গ মুহূর্তের (Momentum) সৃষ্টি করে তাকে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় পরিণত করার কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার যোগ্য ডেপুটি তাজউদ্দীন আহমদ ও অন্যান্য দেশপ্রমিক রাজনীতিবিদদের। পাকিস্তানি শাসক-শাষেকদের ২৩ বছরের স্বৈরাচারী সামরিক জান্তার নানা ষড়যন্ত্র, কূট চক্রান্ত এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির বৈধ অধিকার অস্বীকার করে বাঙালির বিশাল সক্রিয় অসহযোগকে চিরতরে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী পূর্ব-বাংলায় গণহত্যা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে কারাগারে। আটক করে রাষ্ট্রদ্রোহের বিচার শুরু করে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশে তাকে রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী করে বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন। বাংলাদেশের সকল ধর্ম-সম্প্রদায় ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নবীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ। গোটা এশিয়া বিশেষ করে ধর্মপ্রবণ ও শিক্ষাদীক্ষাহীন দরিদ্রপীড়িত দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরনের একটি ধর্মনিরপেক্ষ ও আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নজির। ইতিহাসে বিরল। এদিকে লক্ষ্য রেখেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার তাত্ত্বিক অস্টিন ডেইসি (Austin Dacey) বলেছেন: “Thomas Jefferson could have learned a lot about secular democracy from Sheikh Mujibur Rahman” (The Daily Star, March 17, 2006). শুধু গণতান্ত্রিক দেশের রাজনীতি বিশ্লেষকেরাই নন, সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ার বিপ্লবী রাষ্ট্রনায়ক ফিদেল ক্যাস্ট্রো বঙ্গবন্ধুর মূল্যায়ন করেছেন এই ভাষায়: “I have not seen the Himalays, but I have seen Sheikh Mujib. In personality and in courage, this man is the Himalays. I have thus had the experience of witnessing the Himalays” (১৯৭৩ আলজিয়ার্স)। অন্যদিকে আমাদের এই উপমহাদেশের গভীর ইতিহাসবাধে সম্পন্ন বিবেকী চিন্তাবিদ লেখক অন্নদাশঙ্কর রায় বলেছেন : ‘শেখ মুজিবুর রহমান ও তার নেতৃত্বে বাঙালি হিন্দু মুসলমান যে বীরত্ব দেখিয়েছেন তা ইতিহাস অপূর্ব। কেবল বাংলার ইতিহাসে নয়, ভারতের ইতিহাসে। হয়তো মানুষের ইতিহাসে। …ইতিহাসে তারা অমর।’ ইতিহাসের এই অমর মানুষটি যে বাঙালি সেটি সকল বাঙালির গর্বের বিষয়। মনুষ্যত্ববোধের তাড়নায় সর্বকালের এই শ্রেষ্ঠ বাঙালি শুধু তার নিজ জাতি নিয়েই ভাবেন না, গোটা মানবজাতি নিয়েই ভাবেন। মানবজাতির উত্তরাধিকারী হিসেবে তার বিশ্বদর্শন (world view) তিনি বর্ণনা করেছেন এই ভাষায় : “As a man, what concerns mankind concerns me as a Bengali, I am deeply involved in all that concerns Bengalees. This abiding involvement is born of and nourished by love, which gives meaning to my political and to my very being.” (একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উত্স ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে)। লেখক: বাংলা একাডেমির প্রাক্তন মহাপরিচালক। সারাদেশ/আবির SHARES বিশেষ সংবাদ বিষয়: