প্রধানমন্ত্রীর সভাস্থল জনসমুদ্র, হাওরবাসীর সামনে উড়াল সেতুর হাতছানি The Daily Sylhet The Daily Sylhet প্রকাশিত: ৫:১৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩ মাত্র তিন বছর আগেও দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বৃহত্তর হাওরাঞ্চলের ‘গেটওয়ে’ হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জের হাওরবাসীর ভরসা ছিল পাউ আর নাউ। অর্থাৎ যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা এতটাই মধ্যযুগীয় ও পশ্চাদপদ ছিল যে, বর্ষাকালে নৌকা এবং শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হতো। কিন্তু দৃষ্টিনন্দন অলওয়েদার সড়কপথ আর যাদুমন্ত্রের মতো অভাবনীয় বৈপ্লবিক পরিবর্তনে সেই দশা কাটিয়ে হাওরবাসীর সামনে এখন উড়াল সেতুর হাতছানি। মর্যাদা পেয়েছে পর্যটন এলাকারও। আর তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে আনন্দের অন্ত নেই হাওর পাড়ের মানুষের। মঙ্গলবার দুপুরেই সভাস্থল জনসমুদ্রে রূপ নেয়। বেলা সাড়ে এগারটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিঠামইন পৌঁছেন এবং নব নির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাসের শুভ উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও আন্দোলন সংগ্রামে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ভূমিকা কখনো ভোলার নয়। তাই উনার নামানুসারে মিঠামইনের এ-ই সেনানিবাসের নামকরণ করা হয়েছে। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলার কামালপুরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়িতে যান এবং সেখানে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে এক রাজসিক মধ্যাহ্নভোজে মিলিত হন। বিকাল সাড়ে ৩টার স্থানীয় এক বিশাল সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনের উদ্দেশ্য মিঠামইন ত্যাগ করবেন। জানা গেছে, ধনু, ঘোড়াউত্রা, কালনী নদ-নদীসহ বিস্তীর্ণ হাওর ও অসংখ্য খাল-বিল বিধৌত কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা। এ হাওড় জনপদটি বোরো ফসল ও মৎস্য সম্পদের অফুরন্ত ভাণ্ডার হিসেবে জাতীয় অর্থনীতিতে অসাধারণ অবদান রেখে আসলেও শত বছর ধরেই সামগ্রিক উন্নয়নের বাইরে ছিল। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ক্ষেত্রের এমন নাজুক পরিস্থিতির কারণে এক সময় সরকারি চাকুরেরা সেখানে পোস্টিং পাওয়াকে পানিশমেন্ট হিসাবে বিবেচনা করতো। ১৮৯৮ সালে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন উপলক্ষে আয়োজিত এক জনসভায় ভাষণ দেন। সেই জনসভায় তিনি ফরিদপুর জেলার হাওড়াঞ্চলের পাশাপাশি কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চলের উন্নয়ন এবং হাওড় উন্নয়ন বোর্ড পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন। সে সরকারের মেয়াদেই প্রথম শুরু হয় এই হাওড়াঞ্চলে ডুবো সড়ক নির্মাণের কাজ। তারপর এবারের টানা তিন মেয়াদে কিশোরগঞ্জের এই হাওড়াঞ্চলে শুরু হয় বৈপ্লবিক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ। হাতে নেয়া হয় নদী পারাপারের আধুনিক ফেরি এবং দৃষ্টি নন্দন অলওয়েদার সড়ক পথ ও সেতু নির্মাণ প্রকল্প। ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত ৩০ কিলোমিটার হাওরের অলওয়েদার সড়কের উদ্বোধন করেন। এই ৩০ কিলোমিটার সড়কে রয়েছে ১৪টি সেতু, ৬২টি কালভার্ট ও ৩৭টি ইরিগেশন চ্যানেল। পুরো প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮৭৪ কোটি টাকা। সর্বশেষ মিঠামইন উপজেলা সদরের কাছে স্থাপিত হলো বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাস। এছাড়া একনেকের গত সভায় ১৫ কিলোমিটার হাওড়কে জেলা সদরের সঙ্গে সংযুক্ত করতে উড়াল সেতু নির্মাণের জন্য ৫ হাজার ৬৫১ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটির সময়কাল ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত ধার্য করা হয়। হাওরবাসীর সামনে এখন উড়াল সেতুর হাতছানি। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব যুগান্তকারী উন্নয়নে মিঠামইনের কামালপুরের বীর সন্তান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের তাগিদ ও অনুপ্রেরণা রয়েছে বলে দাবি করে থাকেন। জাতীয়/আবির SHARES জাতীয় বিষয়: